ব্যর্থতা নাকি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ডাকসুর!

, ক্যাম্পাস

ইমরান হোসাইন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 20:57:01

গত বছরের ১১ মার্চ দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আজ এক বছর পূর্ণ হলো ডাকসুর। আগামী ২২ মার্চ শেষ হবে চলতি সংসদের মেয়াদ। বাংলাদেশের মিনি পার্লামেন্ট খ্যাত এই ডাকসু ঐতিহাসিক বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অনবদ্য অবদান রেখেছে।

এক বছরে পেরিয়ে-ডাকসুর সফলতা কতটুকু সেটা নিয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা। শুধু কি ব্যর্থতার নামই ডাকসু? নাকি ক্যাম্পাসে এর মধ্য দিয়ে ইতিবাচক নানা পরিবর্তন সূচিত হয়েছে সেটাই শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের আলোচনার বিষয়।

ডাকসুর সাথে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, নানা বিতর্ক থাকলেও ক্যাম্পাসের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়েছে ডাকসু। ডাকসুকে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায়ের একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করতে পারছে। জবাবদিহিতার জায়গা থেকে প্রতিনিধিরাও ছিল অনেকটা নমনীয়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বড় বড় জনপ্রতিনিধিরাও অনেক ইশতেহার দিয়ে থাকেন। তবে কেউ সেটা পূরণ করতে পারে না। ডাকসুকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনেক বেশি সেটা যেমন সত্য, তেমনি ডাকসুর কারণে ক্যাম্পাসের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনও হয়েছে। এটাও কোনো অংশে কম না। তাই ঢালাওভাবে ডাকসুকে ব্যর্থ বলতে নারাজ তারা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি ক্যাম্পাসে জো বাইক সেবা চালু, হলগুলোতে গেস্টরুম নির্যাতন অনেকাংশে বন্ধ, পরিবহন ট্রিপ বাড়ানো, লাইব্রেরীর সময় বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা, ক্যান্টিনে খাবারের মান উন্নয়ন, গণরুমে বাঙ্ক বেডের ব্যবস্থা, বিভিন্ন সভা সেমিনারের আয়োজন, পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি, বিভিন্ন বিভাগে উন্নয়ন ফি কমানো, জালিয়াতকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধে একাট্টা, রিকশা ভাড়া নির্ধারণ, ফটো কপির দাম নির্ধারণ, হলগুলোতে সুপেয় পানির ফিল্টার স্থাপন, ভেন্ডিং মেশিনে ন্যাপকিন, ইজি বাইক চালুর উদ্যোগ, গণ পরিবহন নিয়ন্ত্রণ ছিল ডাকসুর উল্লেখযোগ্য এবং ইতিবাচক পরিবর্তনেরই ফল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, এক বছর আগের ক্যাম্পাস আর আজকের ক্যাম্পাসে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। ডাকসুর কারণেই ক্যাম্পাসে এক ধরণের সহাবস্থান দেখা যাচ্ছে। অবকাঠামোগত কোনো পরিবর্তন না করতে পারলেও ডাকসু সবকিছুতে রিচ করার চেষ্টা করছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচকই বলতে হবে।

মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাফায়াত রহমান বলেন, আমার মনে হয় ডাকসুকে কোনো শিক্ষার্থী ব্যর্থ বলবে না। কারণ ডাকসুর সেই ক্ষমতা নাই যে তারা সবকিছু করে ফেলবে। তাদের কাজ প্রশাসনকে কাজ দেখিয়ে দেওয়া। সেটা ডাকসু অনেকটা করেছে, করার চেষ্টাও করছে।

তবে ডাকসুতে প্রতিনিধিদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ ডাকসু একটি পার্লামেন্ট হলেও বছরব্যাপী পরিচালিত হয়েছে পৃথক মন্ত্রণালয়ের মতোই। যেটা ডাকসুর ব্যর্থতারই ফসল। সবাই নিজ নিজ উদ্যোগেই বেশি কাজ করেছেন। একে অপরকে দোষারপ করা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধিতেই ডাকসু নেতাদের বেশি মনোযোগ দিতে দেখা গেছে। এসব কাটিয়ে উঠতে পারলে শিক্ষার্থীরা তাদের সত্যিকারের ডাকসু ফিরে পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।

ডাকসুর সফলতা নিয়ে সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন বার্তা২৪.কম বলেন, বিগত একবছরে ডাকসুর সবচেয়ে বড় সফলতা হচ্ছে এটির মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করতে পেরেছি। এখানে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান আছে। সবাই যে যার মতো করে কর্মসূচি পালন করতে পারছে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, গত তিন দশকের মধ্যে (নব্বই পরবর্তী সময়ের পরে)  সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক সময় আমরা গত বছরে কাটিয়েছি।

সাদ্দাম বলেন, ডাকসু শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন ফি, পরিবহন সমস্যা সমাধান, জো বাইক, লাইব্রেরীতে সময় বৃদ্ধি, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবারের মান উন্নয়নসহ অনেক ইতিবাচক কাজ করেছে।

ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডাকসুর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু কাজ করা হয়েছে। বিভিন্ন সম্পাদকরা অনেক ধরণের ভালো কাজ করেছে। তবে মোটাদাগে শিক্ষার্থীদের যে মৌলিক চাহিদা রয়েছে যেমন আবাসন সংকট, অছাত্র বহিরাগতদের বিতাড়িত করা, গণরুম, গেস্টরুম প্রথার উচ্ছেদ এক্ষেত্রে আমাদের সফলতা জিরো। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অসহযোগিতাকে দায়ী করেছে নুর। তবে ডাকসুর কারণে শিক্ষার্থীরা কথা বলতে পারছে, এটা শিক্ষার্থীদের কথা বলার মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে উল্লেখ করে এটাকে অনেক বড় পরিবর্তন বলে দাবি করেন তিনি।

ডাকসুর কার্যক্রমে উচ্ছ্বসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

তিনি বলেন, 'ডাকসু বিভিন্নভাবে অনেক কর্মসূচি করছে এবং সেগুলোতে প্রচুর শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততাও দেখা গেছে। এগুলো দেখে খুব ভালো লাগছে। এত অল্প সময়ে তারা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক।'

ডাকসুর কার্যক্রম সম্পর্কে শিক্ষার্থীরাই ভালো মতামত দিতে পারবেন বলেও মনে করেন উপাচার্য। তবে ডাকসুর আগাম নির্বাচন নিয়ে মুখ খোলেননি উপাচার্য আখতারুজ্জামান।

তিনি বলেন, অগ্রিম কোনো কিছু বলতে পারবো না। তবে সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর