ড. মু. আলী আসগর: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে, বাংলাদেশে আশির দশকে (১৯৮০ থেকে ১৯৯০) মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৮ বছর এবং নব্বই এর দশকে (১৯৯০ থেকে ২০০০) মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫ বছর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৬ বছর দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাবে এ আয়ুষ্কালের তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএসের ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০১৯’ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের দুই হাজার ১২টি নমুনা এলাকার দুই লাখ ৯৮ হাজার ৮১০টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই তথ্য দিয়েছে বিবিএস।
মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক জানান, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তা ছাড়া খাদ্যগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। পুষ্টিগ্রহণের ক্ষেত্রে তুলনামূলক অগ্রগতি হয়েছে। মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। সব কিছু মিলিয়ে গড় আয়ু বেড়েছে।
প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ তরুণ-তরুণী বাংলাদেশের চাকরির বাজারে যোগদান করে। এদের বড় একটি সংখ্যক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার অনেক। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই সংকট আরো তীব্রতর হয়েছে। যারা বেকার আছে, তাদের চাকরির খুব প্রয়োজন, তাদের জীবনটা এই মহামারির কারণে একটা অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
১৯৮০-এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজটের ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ স্নাতক, বিশেষত স্নাতকোত্তর শিক্ষা ২৭ বছর বয়সের মধ্যে শেষ করতে পারছিল না। বিষয়টি অনুধাবন করে নব্বই এর দশকের শুরুতে ১৩ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়। নব্বই এর দশকে দেশের মানুষের (১৯৯০ থেকে ২০০০) মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫ বছর। বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৬ বছর। ফলে এখন মানুষের শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরো পড়ুন ➥ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন
এই শতাব্দীতে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজট কিছুটা কমায় ধারণা করা যায়, প্রায় সবাই ৩০ বছর বয়সের মধ্যে শুধু স্নাতক নয়, স্নাতকোত্তর শিক্ষাও শেষ করতে পারছেন। শিক্ষিত যুবকদের সংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় চাকরিপ্রার্থীরা কয়েকবার চেষ্টা করার সুযোগ প্রত্যাশা করেন। চাকরিপ্রার্থী যুবসম্প্রদায় কর্মসংস্থানের আশায় যদি আরও কিছুদিন ছাত্রাবস্থার মতো পড়াশোনা চালিয়ে যায়, তবে পাঠাভ্যাসবিমুখতার এই যুগে তাদের ‘বাধ্যতামূলক’ এই জ্ঞানচর্চাকে তো উৎসাহ দেওয়াই মঙ্গলজনক!
অধিকিন্তু, দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পাঠদানের সূযোগ না থাকায়, বর্তমান কোভিড-১৯ রোগ সঙ্কটের কারণে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৭/৮ মাস সেশন জট সৃষ্টি হয়েছে। ১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে বিশ্বখ্যাত ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব চূড়ান্তভাবে (crucially) নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের কারণে মানবদেহে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থিতিকালের উপর। সুতরাং করোনা সঙ্কট কাল অনিশ্চিত। করোনা সঙ্কটের কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স কতটা বাড়ানো যায়? বর্তমান ৩০ বছর থেকে এ বয়স অন্তত দুই বছর বাড়িয়ে ৩২ বছর করা তো খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। তবে মেধাবী চাকরিপ্রার্থীকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এ বয়স ৩৫ বছর করার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করলে দেশ উপকৃত হবে। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ -এর বেশি। যেহেতু সরকারের ব্যাপক প্রচেষ্টার ফলে দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি অবসরের বয়স ‘৫৯’ থেকে মাত্র/অন্তত এক বছর বাড়িয়ে ‘৬০’ বছরে উন্নীত করা হয়, তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা হলেও সক্রিয় কর্মকাল স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশিত ২৫ বছর পূর্ণ হতে পারে।
ড. মু. আলী আসগর: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়