সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন
চারটি করোনাভাইরাস, 229E, OC43, NL63 এবং HKU1, মানুষের শ্বসনতন্ত্রের উচ্চাংশে (নাক, কান, গলা) মৃদু থেকে মাঝারি সংক্রমণ করে; অন্য তিনটি করোনাভাইরাস, SARS-CoV-1, MERS-CoV ও সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির জন্য দায়ী ভাইরাস SARS-COV-2 মানুষের মারাত্মক অসুস্থতার কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে (তথ্য সূত্র: দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন )।
ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০২-২০০৩ সালের মহামারির জন্য দায়ী ভাইরাস SARS-CoV-1 ও ২০১৯-২০২০ সালের মহামারি কোভিড-১৯ এর ভাইরাস SARS-COV-2 এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ জেনেটিক সম্পর্ক আছে।
ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সার্স-কোভ-১ নামক করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৫০ জনের অধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং ৮ হাজারের অধিক মানুষ সংক্রমিত হয়েছিল। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ১৮ নভেম্বর, ২০২০ তারিখ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, চলমান মারাত্মক সংক্রমক সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের কারণে বিশ্বে ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ কোটি ৬২ লক্ষ ৪৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং মৃতের সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আরো পড়ুন ➥ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব নির্ভরতা
৩০ মার্চ, ২০২০ তারিখের বিশ্বখ্যাত ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, সার্স-কোভ-১ ও সার্স-কোভ-২ উভয় ভাইরাসই তাদের রিসেপটর-বাইন্ডিং ডোমেন এর মাধ্যমে মানুষের কোষের একই রিসেপটর এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২ (এসিই ২) তে সংযুক্ত হয়।
ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাসের রিসেপটর-বাইন্ডিং ডোমেনের হটস্পটগুলোর স্পাইক প্রোটিন সার্স-কোভ-১ এর থেকে ভিন্ন গাঠনিক বৈশিস্টের কারণে সার্স-কোভ-২ মানুষের কোষের এসিই-২’কে তীব্রভাবে আকর্ষণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তীব্র সংক্রমণ ও দ্রুত বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
যখন বহিরাগত আক্রমণকারী যেমন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে প্রবেশ করে, দেহের লিম্ফোসাইটস নামক ইমিউন কোষগুলো অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে সাড়া দেয়। অ্যান্টিবডি (Immunoglobulin G বা IgG) হচ্ছে প্রোটিন। এই অ্যান্টিবডিগুলো বহিরাগত আক্রমণকারীর (এন্টিজেন অর্থাৎ ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া) সাথে লড়াই করে এবং দেহকে অতিরিক্ত সংক্রমণের থেকে রক্ষার চেষ্টা করে।
করোনাভাইরাস, HCoV-OC43 ও HCoV-HKU1 এর সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি র ফলে গঠিত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চল্লিশ সপ্তাহ টেকসই (তথ্যসূত্রঃ এপিডিমিয়োলজি এন্ড ইনফেকশন জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ); অন্যদিকে, ইমারজিং ইংফেক্সাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, ২০০২-২০০৩ সালে সংগঠিত মহামারির জন্য দায়ী করোনাভাইরাস SARS-CoV-1 এর সংক্রমণের ফলে মানবদেহে গঠিত নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি উক্ত ভাইরাসের ক্ষেত্রে গড়ে দুই বছর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রেখেছিল।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, ‘কোভিড-১৯ এর মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধ রেসপন্স/সাড়ার স্থিতিকাল এখন পর্যন্ত অজানা।’ সিডিসি ব্যাখ্যা করেন, Middle East respiratory syndrome-CoV/MERS-CoV সংক্রমণ আরোগ্যলাভকারী ব্যক্তিকে শীগগির পুনঃসংক্রমিত করে নাই, কিন্তু কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে একই রোগ প্রতিরোধ সুরক্ষা দেখা যাবে কিনা তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
আরো পড়ুন ➥কোভিড-১৯ রোগীর জটিল অবস্থার সম্ভাবনা
১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে বিশ্বখ্যাত ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণের ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতে রোগের সংক্রমণের প্রোজেক্টিং করা হয়েছে। উক্ত গবেষণায় বিবেচিত মূল ফ্যাক্টরগুলো হলো— ঋতুর ভিন্নতায় সংক্রমণের মাত্রা, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থিতিকাল এবং সার্স-কোভ-২ ও অন্যান্ন করোনাভাইরাসের মধ্যে দেহে ক্রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাত্রা।
১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে বিশ্বখ্যাত ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে কোভিড-১৯ রোগ বার্ষিক (প্রতি বছর), দ্বিবার্ষিক (দুই বছরে একবার) বা বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রমণ ঘটানোর সম্ভাবনা আছে। যদি এই ভাইরাসটি মানবদেহে HCoV-OC43 ও HCoV-HKU1 করোনাভাইরাস দুইটির মত স্বল্প সময়ের (৪০ সপ্তাহ) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তবে প্রতি বছর কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে এবং SARS-CoV-1 করোনাভাইরাসের মত দুই বছর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে তবে দ্বিবার্ষিক ভাবে কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। ১৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখে বিশ্বখ্যাত ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ অনুযায়ী, ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব চূড়ান্তভাবে (crucially) নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের কারণে মানবদেহে সৃষ্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থিতিকালের উপর।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৭ বছর। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৬৫ বছর এবং বিচারকদের ৬৭ বছর। বর্তমান সরকার নার্সদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স যেমন ৩৫ বছরে উন্নীত করেছে। বর্তমানে একজন শিক্ষার্থীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ শিক্ষাজীবন শেষ করতে সময় লাগে প্রায় ২৭-২৮ বছর। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০-এর বেশি।
আরো পড়ুন ➥কোভিড-১৯ বনাম ফ্লু
১৯৮০- এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজটের ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ স্নাতক, বিশেষত স্নাতকোত্তর শিক্ষা ২৭ বছর বয়সের মধ্যে শেষ করতে পারছিল না। বিষয়টি অনুধাবন করে ১৩ তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়।
শিক্ষিত যুবকদের সংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় চাকরিপ্রার্থীরা কয়েকবার চেষ্টা করার সুযোগ প্রত্যাশা করেন। করোনা সঙ্কটে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৭/৮ মাস সেশন জট সৃষ্টি হয়েছে। করোনা সঙ্কট এখনও অনিশ্চিত। চাকরিপ্রার্থী যুবসম্প্রদায় কর্মসংস্থানের আশায় যদি আরও কিছুদিন ছাত্রাবস্থার মতো পড়াশোনা চালিয়ে যায়, তবে পাঠাভ্যাসবিমুখতার এই যুগে তাদের এই জ্ঞানচর্চাকে তো উৎসাহ দেওয়াই উত্তম! সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স অন্তত দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়া খুবই প্রয়োজন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ড. মু. আলী আসগর: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়