ব্র্যাকেট বন্দি জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কোন পথে?

, যুক্তিতর্ক

লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:00:54

আবার ব্র্যাকেট বন্দি হলো আলোচিত-সমালোচিত সেনাশাসক এইচএম এরশাদের রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। দলটিতে এখন দুইজন চেয়ারম্যান। গৃহদাহে জর্জরিত দলের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে চলছে রাজনৈতিক জল্পনা।

দলের একটি অংশের হাল এরশাদের ছোটভাই জিএম কাদেরের হাতে। অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এরশাদ-পত্নী রওশন এরশাদ। এরশাদের এই দুই শরীক ছাড়াও একদার রাজনৈতিক অনুসারী নাজিউর রহমান মঞ্জু এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু অনেক আগেই দলের কিয়দাংশ ভেঙে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

সর্বসাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দলের নেতৃত্বে আসীন জিএম কাদের ভারত সফরে থাকার সুযোগে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন এরশাদ। তবে এরশাদপত্নীর এই দাবিকে ‘ভুয়া খবর’ বলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। দলের অন্য শীর্ষ নেতারাও বলছেন, তারা এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তে সম্মতি দেননি।

নেতৃত্ব ও সংগঠনে লেজেগোবরে অবস্থা হলেও
বরাবরই জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে আলোচনায় শীর্ষে চলে আসে জাতীয় পার্টি আর দলে ঘাপটি মেরে থাকা নেতারা ওয়ার্ম আপ শুরু করেন। নির্বাচনী মেরুকরণের রাজনীতিতে প্রায় সময়ই খবরের শিরোনাম হয় ক্ষমতার আশীর্বাদপুষ্ট এই দলটি। এবার আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার খবরের শিরোনাম হলো জাতীয় পার্টি। একই সঙ্গে ময়দানে সরব হলেন দলের চেয়ারম্যান পদের দাবিদার দুইজন।

উল্লেখ্য, এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদ নিয়ে কয়েকদফা টানাটানি হয় দেবর-ভাবির মধ্যে। দলের মধ্যে দুটি গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। এতদিন জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান ও রওশন এরশাদ কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

তবে এতোসব করে জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের কোন্দল লোপ পেয়েছিল, বলা যাবে না। বরং চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল, যা বিস্ফোরিত হয়েছে আবার। জিএম কাদের যখন ভারত সফরে তখন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রওশন এরশাদ।

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টিতে সুপ্ত থাকা জিএম কাদের এবং রওশন গ্রুপ চাঙ্গা হচ্ছে। ক্ষমতামুখী দলটির উভয় অংশই সব সময় নির্বাচন করতে এবং ক্ষমতার শরীক থাকতে ইচ্ছুক। কিন্তু এরশাদহীন জাতীয় পার্টি অতীতের জেল্লা দিনে দিনে হারাচ্ছে। উপরন্তু, বিভক্ত হলে ভোটের রাজনীতিতে দলটি আদৌ কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সামনের নির্বাচন হবে রাজনীতির 'টাফ ফাইট'। উজ্জীবিত বিএনপি ও মিত্ররা সর্বশক্তিতে মাঠে থাকবে। আওয়ামী লীগও সহযোগীদের নিয়ে কোমরকষা লড়াই চালাবে। জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ থাকলে দুই প্রধান শক্তির কোনো একটিকে লাভবান করতে ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করতে পারবে। কিন্তু রাজনীতির অনুঘটক শক্তি জাতীয় পার্টি নিজেই যদি বিভক্ত ও আবারো ব্র্যাকেট বন্দি হয়, তাহলে দলটির ভবিষ্যৎ নিষ্প্রভ হতে বাধ্য।

উতপ্ত রাজনীতির দামামা ও সামনের নির্বাচনী দ্বৈরথের সঙ্কুল পরিস্থিতিতে ব্র্যাকেট বন্দি জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর