১০০ বছরের জন্য 'ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা'
নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ডেল্টা তহবিল গঠন
আগামী ১০০ বছরের জন্য 'ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা' অনুমোদন দিচ্ছে সরকার। আগামী মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ পরিকল্পনায় অনুমোদন দেওয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, এ ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় দেশের নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্ব পালন করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে নেদারল্যান্ডস সরকার । এর আওতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ডেল্টা তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল বিশেষ করে গ্রিণ ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে (পিপিপি) বিবেচনা করা হবে।
গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হয়। পরে তিনি এটিতে কিছু সুপারিশ দিয়ে নীতিগত অনুমোদন দেন।
পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বার্তা২৪.কম'কে বলেন, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হ্রাস করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিবেচনায় রেখে কৃষি, পানিসম্পদ, ভূমি, শিল্প, বনায়ন, মৎস্যসম্পদ প্রভৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য দীর্ঘমেয়াদী (৫০-১০০ বছর) একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় 'বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০' প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়।
তিনি আরও বলেন, এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিটি ধাপে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষক, একাডেমিক, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জাতীয়, আঞ্চলিক ও তৃণমূল পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের অংশীজনের অংশগ্রহণে মোট ২০টি কর্মশালা, আলোচনা সভা ও মতবিনিময় সভা (মোট উপস্থিতি ১২০০ জন) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে দেশী পরামর্শকরা অংশগ্রহণ করেন। মহাপরিকল্পনার দলিল প্রণয়নের কাজটিও প্রথিতযশা দেশী পরামর্শক দলের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। যারা এ দেশের পরিবর্তনশীল ব-দ্বীপ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ।'
নেদারল্যান্ডস বিশ্বে ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় সর্বজনস্বীকৃত একটি দেশ। তাদের কারিগরি সহায়তায় পরিবর্তনশীল বাংলাদেশে ব-দ্বীপ প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সম্পূর্ণ দেশীয় পরিবেশ, প্রতিবেশ বিবেচনায় এ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তহবিল গঠনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৩০ সাল নাগাদ জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ সমপরিমান অর্থায়ন সম্বলিত বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল গঠন করতে হবে। যার মধ্যে ২ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ অানতে এবং শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে। তহবিলের ৮০ ভাগ সরকারি ও ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বড় শহরগুলোতে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করার চেষ্টা করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে।'
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় ২০৩০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ এবং পানি সম্পদ স্থাপনা সংক্রান্ত পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় পুরো প্রকল্প ব্যয়ের ২ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমান ব্যয়ের তিন গুণ। পরিকল্পনায় সরকারি বিনিয়োগের খাতভিত্তিক বিভাজনে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগ ধরা হয়েছে (২০১৫-১৬ অর্থবছরের স্থিরমূল্যে) ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-৩১ সাল পর্যন্ত ৩২ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা মোট বিনিয়োগের ৫ ভাগ। সহায়ক পরিবেশ খাতে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২ হাজার কোটি টাকা এবং ২০৩১ সাল পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা, যা বিনিয়োগের দুই ভাগ।
অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনসহ প্রধান নদী এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা খাতে ২১ সাল পর্যন্ত সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ৩১ সাল পর্যন্ত ২ লাখ ২৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যা মোট বিনিয়োগের ৩৫ শতাংশ। শহর এবং গ্রামাঞ্চলের সবুজায়ন, পানি সংরক্ষণ খাতে ২১ সাল পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, ৩১ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা মোট বিনিয়োগের ২১ শতাংশ।