বঙ্গবন্ধু সপ্তাহে ৭ দিনই অফিস করতেন। ১৯৭৫ সালের সেই দিনটি ছিল শনিবার। অফিসে এসে বললেন আজ বাঙ্গালীর অন্যতম মুক্তির সনদে সই করবো। তারপর গ্যাস ক্ষেত্র ৫টি কেনার ফাইলে সই করেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন একান্ত সচিব ড. ফরাসউদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) এফইআরবি আয়োজিত 'বঙ্গবন্ধু এনার্জি সিকিউরিটি এবং আজকের বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। ভার্চুয়াল এ আয়োজনের সহযোগি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন(বিপপা)।
বঙ্গবন্ধুর সাবেক একান্ত সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আরো বলেন,গ্যাসক্ষেত্রগুলো সহজে দিতে চায়নি বহুজাতিক কোম্পানি শেল। বঙ্গবন্ধু তাদের বলেছিলেন দেখো তোমরা যদি না বিক্রি করো, তাহলে নতুন আইনে আমরা অধিগ্রহণ করতে বাধ্য হবো। পরে শেল বাধ্য হয়েছিলো। ইরানে তখন অধিগ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল, শেল হয়তো সেটাতেই ভয় পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ বিষয়টি জড়িত থাকলে আমি খুবই দুঃখ পাবো।
তিনি বলেন, সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে শিল্পায়ন ও বিদ্যুৎ জ্বালানির কথা। ৪৩ অনুচ্ছেদে জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। প্রথম বাজেটে ১২ ভাগ বিনিয়োগ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে। কাউন্টার পার্ট ফান্ড থেকে পল্লী বিদ্যুৎ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু দেখে যেতে পারেননি। জনবন্ধু শেখ হাসিনার অর্জনটা অনেক। ৯৭ ভাগ ঘরে বিদ্যুৎতায়ন করেছে। মুজিববর্ষে শতভাগ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। শিল্পায়ন না হলে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হয় না। সরকার সেটিকে সঠিকভাবেই নিয়েছে। আমরা উন্নয়নের এমন পর্যায়ে রয়েছি। তখন পাইপ দিয়ে বাসায় গ্যাস নেওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু না। অবশ্যেই আমাদের সুশাসনের দরকার। আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ রয়েছে তারা কি একমত রয়েছে। ১০ বছরে বাপেক্সে আট জন এমডি পরিবর্তন এটি ভালো কথা নয়।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের রুগ্ন মূলধন বাজার এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকের অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি কথা শুনেছি, এখন কিন্তু ব্যাংকগুলো আমানত বেড়েছে। জনবন্ধু শেখ হাসিনার কারণে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে বিপপা চেয়ারম্যান ইমরান করিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। তিনি যুগান্তকারী ও আধুনিক দর্শন দিয়েছেন। আমরা যারা দুর্ভাগ্যবশত বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি কিন্তু তারা শেখ হাসিনাকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজকে যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখছ,। এটি হয়তো আরো আগেই দেখতে পেতাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ বেসরকারি খাত থেকে আসছে অনেকে না বুঝে সমালোচনা করেন। তাদেরকে মনে করে দিতে ২০১০ সালের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কথা। এই বিদ্যুতের কারণে আজকে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, সিস্টেমলস সিঙ্গেল ডিজিট রয়েছে। আরো কমানো যায়। ১৫-২০টি কোম্পানি সোলারে বিষয়ে নোয়া দিয়েছি। কিন্তু কেনো পারছেন না তারা। স্পন্সরের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা দরকার। মন্ত্রী মহোদয় একটি কথা বলে আসছিলেন। মেইনটেইনস কোম্পানি করার এটা আমি পারিনি। নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গেলে এই কোম্পানি জরুরি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার সালেক সুফী বলেন, যেসব গ্যাস ফিল্ড রয়েছে এগুলোতে আর গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই এ কথা বলবো না। পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস পাওয়া যাবে না এ কথা বলার সুযোগ নেই। আমি মনে করি বাংলাদেশের ফুলবাড়ি কয়লা ক্ষেত্র রেডি রয়েছে। যদি তারা দক্ষ না হয় তাহলে চুক্তি বাতিল করেন। তবে আমি মনে করে এটা জটিল। কারণ বিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনতে হবে।
পেট্রোবাংলার কথা বলবো, এগুলো ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে আমলারা। বোর্ডগুলো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিস্ট্রাকচার করা হয়। স্ক্যাডা নিশ্চিত করতে পারলে সহজেই চিহ্নিত করা যেতো কোথাও চুরি হতো। আমলাদের দিয়ে চালাতে পারবেন না।
এফইআরবির সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক শাহনাজ বেগম বলেন, জ্বালানি খাতে সত্যিকারভাবে সুশাসনের অভাব রয়েছে। দক্ষ লোককে কাজের সুযোগ দেওয়া হয় না। যদি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয় তাহলে সংকট থেকেই যাবে। বিসিএস পাশ করে এসে টেকনিক্যাল লোককে মূল্যায়ন করতে চান না। যারা যে কাজের যোগ্য তাকে সেখানে বসাতে হবে। ওনি সিএসপি অফিসার বলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হবে। এটি হলে চলবে না।
এফইআরবির সদস্য আজিজুর রহমান বলেন, অনেকে বলেন আমাদের আশানুরূপ ব্যবহার হচ্ছে না। বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান আবার রিভিউ করতে হচ্ছে। দুইটা এফএসআরইউ করেছি, প্রথমটা আসার পর অর্ধেকের নিচে নিতে পেরেছি। এক বছর পর পাইপলাইন হলে পুরো ক্ষমতা ব্যবহার হবে। দ্বিতীয় এফএসআরইউএর ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। অথচ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়েছে।
এফইআরবির ভাইস চেয়ারম্যান মুজাহিরুল হক রুমেন বলেন, অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে বাপেক্সের বেতন কাঠামোর অনেক পার্থক্য রয়েছে। যে কারণে বাপেক্সের কর্মীরা অনেক চাকরী ছেড়ে বিদেশ চলে যাচ্ছে। যদি তিতাস দুর্নীতিমুক্ত করতে না পারি তাহলে বঞ্চিত হবো, হচ্ছি। বাসা-বাড়িতে ৪০-৪৫ শতাংশ সিস্টেম গেইন করে।
ইফিআরবি চেয়ারম্যান অরুণ কর্মকার বলেন, বিদ্যুতের উন্নয়ন প্রশ্নাতীত। তবে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সঠিকভাবে অ্যাড্রেস করতে হবে।