না আছে জ্বালানি (কয়লা) সরবরাহের নিশ্চয়তা, না আছে প্রতিবেশগত সমীক্ষা, আট বছরেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় প্রকল্পগুলো এখন বাতিলের খাতায়। সেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার তদবির চালিয়ে যাচ্ছে ওরিয়ন গ্রুপ।
উন্নয়নশীল দেশে এমন ঋণ প্রদানকে খুবই ঝুঁকিপুর্ণ বিবেচনা করা হয় এবং এমন ঘটনা বিরল বলে জানিয়েছে অর্থনীতিবিদরা। শঙ্কার কথা হচ্ছে কিছু সুবিধাভোগী এবং ওরিয়ন গ্রুপের পেইড এজেন্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ প্রদানের তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কোনোভাবেই কমার্শিয়ালি ভায়াবল না। এখানে নদীর যে নাব্যতা সেই ড্রাফটের জাহাজ এনে হিউজ কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব না। যদিও ওরিয়ন এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সরিয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। নানা কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর পিঠ বাঁচাতে নানা ফন্দি ফিকির করে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য ২৬ জুলাই রূপালী ব্যাংকে আবেদন দেয়। পুনঅর্থায়নের মাধ্যমে এই ঋণ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ওরিয়ন যদি সময় মতো ওই টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি রূপালী ব্যাংক থেকে আদায় করবে।
সূত্র জানিয়েছে, ওরিয়ন গ্রুপকে ঋণ দেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কমকর্তাদের মধ্যে মতদ্বন্দ্ব শুরু হয়। কর্মকর্তাদের একটি অংশ ওরিয়নকে ঋণ পেয়ে দেওয়ার জন্য তদবিরও শুরু করেছিলেন। ওরিয়ন সময়মতো ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে রূপালী ব্যাংক বড় রকমের সংকটে পড়তে পারে। বোর্ড মিটিং-এ একাধিক সদস্যের বিরোধিতার পরও ওরিয়নের ঋণে সম্মতি দেয় রূপালী ব্যাংক। ১৯ আগস্ট প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়। ঋণ প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক ধরে আরও বিস্তারিতভাবে বিবরণ চেয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে মত পরিবর্তন করে রূপালী ব্যাংক।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৯ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা)। পুঁজি হিসেবে মোট ব্যয়ের মাত্র ২০ শতাংশ ওরিয়ন বিনিয়োগ করতে চায়। বাকি ৮০ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে এখন।
এবার অগ্রণী ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় ওরিয়ন গ্রুপ। ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম অগ্রণী ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন উদ্বৃত্ত অবস্থায় রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকার এখন মেগা প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে টাকা নিয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তেমনই একটা বড় প্রকল্প। এই ধরনের উদ্যোগ দীর্ঘ মেয়াদে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে ভূমিকা রাখবে।’
অগ্রণী ব্যাংককে প্রলুব্ধ করার জন্য বেশকিছু ব্যবসার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ওরিয়ন। ব্যাংকটি সার্ভিস চার্জ হিসেবে ভালো কমিশন আয় করতে পারবে। ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণপত্র খোলা হবে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে, সেখান থেকে কমিশন বাবদ আরও আয় করা যাবে। অগ্রণী ব্যাংক এখন ও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বলে সূত্র জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়োগ পাওয়া রূপালী ব্যাংকের পর্যবক্ষেক এমডি সিরাজুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, রূপালী ব্যাংক বিষয়টি থেকে সরে এসেছে। আমি বোর্ড সভায় অপোজ করেছিলাম। এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাচ্ছি না।
রিজার্ভ থেকে ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এটি একক কোনো সিদ্ধান্তে হবে না। সরকার কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটি বড় বিষয়। সরকার নিশ্চয় ভেবে চিন্তে রাষ্ট্রের ভালোটাই সিদ্ধান্ত নেবে।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।