এলপিজি অপরেটস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব)-এর দাবি করা এলপি গ্যাসের বাড়তি দামের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত ১২ এপ্রিল ঘোষিত এলপিজির দরকে অযৌক্তিক ও একপেশে উল্লেখ করে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করে লোয়াব।
লোয়াবের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিইআরসি দর ঘোষণার সময়ে তাদের অনেকগুলো খাতের খরচকে বিবেচনা আনা হয়নি। এরমধ্যে রয়েছে অপরেটর প্রফিট ৮৯ টাকা, ডিস্ট্রিবিউশন খরচ ২৫ টাকা। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার প্রফিট যথাক্রমে ২৪ টাকা ২৭ টাকা ধরা হয়েছে এটি বাস্তবসম্মত হয়নি। ওভারহেড কস্ট ২৩ টাকার স্থলে ১৪৩ টাকা ধরা হয়েছে। সবমিলিয়ে মোট খরচ ৪৮১ টাকা চেয়েছিলাম, সেখানে বিইআরসি ১৯৪ টাকা অনুমোদন করেছে। এলপিজি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় ১২ কেজি সিলিন্ডারের ঘোষিত দর ৯৭৫ টাকার সঙ্গে আরও ২৮৭ টাকা যুক্ত করা হোক।
লোয়াবের সেই চিঠির জবাবে আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে বিইআরসি। লোয়াবকে প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের দাবীকৃত ২৮৭ টাকা যুক্ত করলে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম দাঁড়ায় ১২৬২ টাকা। এই মূল্য যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত হবে না মর্মে কমিশন মনে করে।
কমিশন বলেছে, মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক অনুসৃত নীতি অনুসরন করা হয়েছে। এ ছাড়া এলপিজি বোতলজাত ও মজুদকরণ চার্জ ১৪৩ টাকা (১২ কেজি) নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসিবে কোম্পানি কর্তৃক দাখিলকৃত সর্বশেষ নিরীক্ষিত হিসাব প্রতিবেদনের(অডিট রিপোর্ট) তথ্যাদি বিবেচনা নেওয়া হযেছে। মোট ৬টি খাতে ব্যয় যুক্ত করা হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং ওভারহেড ব্যয় ২২ টাকা, বিক্রয়, বিতরণ প্রশাসনিক ব্যয় ৪৬ টাকা, অবচয় ৪২ টাকা, ঋণের সুদ ২৩ টাকা, মুনাফা ১৫ টাকা কর্পোরেট কর ৫ টাকা ধরা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এপ্রিলে দর ঘোষণার পুর্বে মার্কেট যাচাই করে দেখা গেছে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি সিলিন্ডার ৯৩০ থেকে ৯৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া কমিশন এনবিআর’র সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে তিন ধাপের ১৫ শতাংশ মুসক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। নতুন করে মুজদকরণ ও বোতলজাত পর্যায়ে ৫ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বিইআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে অনেক কম দামেই বাজারে এলপিজি বিক্রি করছে। অথচ দর ঘোষণার পর বাড়তি চাওয়াটা বেশ রহস্যজনক। মুসক কমে আসায় নতুন করে বাড়তি সুবিধা পাবেন অপরেটর।
কমিশনের সদস্য মকবুল ই এলাহী চৌধুরী এক সেমিনারে বলেছেন, ‘এলপিজি প্রাইসিংয়ে লোয়াব যে ইন্ডিকেটর ব্যবহার করেছে। আমরাও সেই ইন্ডিকেটর ব্যবহার করেছি। লোয়াব দাবী করেছে অপরেটর প্রফিট ও ডিস্ট্রিবিউটর প্রফিট অ্যাড্রেস করা হয়নি। তারা হয়তো তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভালো করে দেখেনি। আমি অনুরোধ করবো ভালো করে দেখার জন্য। এগুলো অ্যাড্রেস করা হয়েছে। তাদের ইন্ডিকেটর আমাদের ইন্ডিকেটর একটিও তফাৎ নেই। কয়েকটা বিষয়ে কস্ট আমরা তাদের মতো করে ধরিনি।’
গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হযেছিল সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য অর্থাৎ গ্যাসের নীট মূল্য ধরা হয়েছে। সিপির দর উঠা-নামা করলে প্রতিমাসে দর সমন্বয় করা হবে। ভোক্তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে এলপি গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজারদর এপ্রিল মাসে আরও কমে গেছে। টন প্রতি প্রায় ৫৫’শ টাকা কমে গেছে, এর সুফল ভোক্তারা আগামী মাস থেকে পেতে যাচ্ছেন বলে বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে।
২৮ এ্রপ্রিল নতুন দর ঘোষণা আসতে পারে:
মার্চের সিপি (সৌদী আরামকো কন্ট্রাক্ট প্রাইস) দর ছিল যথাক্রমে প্রতি টন প্রোপেন বিউটেন ৬২৫ ও ৫৯৫ ডলার। সেই দর কমে চলতি মাসে (এপ্রিল) হয়েছে যথাক্রমে ৫৬০ ও ৫৩০ ইউএস ডলার। প্রোপেন টন প্রতি ৫৫১২ টাকা দর কমেছে (ডলার ৮৪.৮০)। অন্যদিকে বিউটেনে দরও সমান হারে কমে গেছে। সে হিসেবে গড় করলে কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ৫ টাকা কমে গেছে। এতে সিলিন্ডার (১২ কেজি) প্রতি দাম প্রায় ৬৫ টাকার মতো কমে আসার কথা।
যদিও পুর্বের ঘোষিত দর খুব কম ক্ষেত্রেই কার্যকর হতে দেখা গেছে। এপ্রিলে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ৯৭৫ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে বিইআরসি। কোথাও কম দামে আবার কোথাও কোথাও বেশি দামে বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিইআরসি ঘোষিত দর কার্যকর না হওয়ার প্রসঙ্গে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান এক সেমিনারে বলেছেন, দাম বাড়লে বাড়বে, আবার কমলে যেনো কমানো হয়। না হলে শুধু কাগুজে আদেশ দিয়ে বসে থাকলে কাজ হবে না। এবার লকডাউন কারণে সেভাবে দেখা হয় নি। সামনের মাস থেকে কঠোরভাবে দেখা হবে। বিইআরসি যে আদেশ জারি করেছে তা পালনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।