সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারি বিভিন্ন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’। ‘নগদ’-এর মাধ্যমে মানুষ এখন সহজেই তাদের প্রতিদিনের আর্থিক সমস্যার সমাধান করতে পারছে। ফলে এখন মানুষের আর্থিক অন্তর্ভূক্তি এখন হাতের মুঠোয়।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ থেকে শুরু করে, মোবাইল রিচার্জ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, সেন্ড মানি এবং বিভিন্ন কেনাকাটায় মার্চেন্ট পেসহ আরও অনেক সহজ সেবার মাধ্যমে মানুষের সময় ও অর্থ বাঁচাচ্ছে ‘নগদ’। যা সহজ করছে মানুষের ব্যস্ততম দৈনন্দিন জীবন।
কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে ঢাকা থেকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিজিটাল প্রকল্প দেখতে যান। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও দেখা যায় ডিজিটাল সেবা কীভাবে বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনমান।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাসিন্দা মো. আনিসুর রহমানের (৭৬) সঙ্গে কথা হয়। ভাতার টাকা নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁর চোখেমুখে দেখা যায় খুশির ঝিলিক। আনিসুর রহমান বলেন, “টাকা তুলতে এখন আর ব্যাংকে লাইন দেওয়ার দরকার হয় না। শুক্র-শনিবার বা ছুটির দিন নাই। টাকা আসলে সাথে সাথে হাতে পাচ্ছি।”
একই এলাকার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোসাম্মাদ কুসুম খাতুন। নহাটা পলিটেকনিক শাহমকদুম পেয়ারলেস এমবি কলেজে পড়ছেন তিনি। জন্ম থেকেই পায়ে সমস্যায় চলতে ফিরতে খুবই কষ্ট হয়। সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভাতায় চলছে তার পড়ালেখা।
একটি সময় এই ভাতা তুলতে তাকে যেতে হতো উপজেলা সদরে। সেটি ছিল কুসুম খাতুনের জন্য এক বিড়ম্বনার অধ্যায়। আর এখন ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর মাধ্যমে নির্ধারিত সময় হলেই কুসুম খাতুনের মোবাইলে চলে আসে ভাতার টাকা। সঙ্গে থাকে ওই টাকা ক্যাশ-আউট করার খরচও। কুসুম বলেন, “নগদ এবং সরকারের প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা। অন্তত আমার একটা দুর্ভোগ তো দূর হয়েছে।”
দেশে গত এক বছরে কুসুম-আনিসুরের মতো তিন কোটি পিছিয়ে পড়া মানুষকে সাড়ে আট কোটিবার সরকারের বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান বিতরণ করেছে ডাক বিভাগের ‘নগদ’। এ নিয়ে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও জানান, দিন বদলের সময়ে দিন বদলে দেওয়া সেবা হয়ে এসেছে ‘নগদ’।
‘নগদ’-এ অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এই সেবাটি। ফলে মাত্র আড়াই বছরে ‘নগদ’-এর গ্রাহক সংখ্যা এখন সাড়ে ৫ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাত্রার পর থেকেই এই সেবাটি সকল প্রকার আর্থিক লেনদেন ও সংশ্লিষ্ট খাতে ডিজিটালাইজেশন নিশ্চিত করেছে। সরকারি এই সেবাটি একের পর এক নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেনে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। ফলে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র এবং পিছিয়ে পড়া মানুষটির জন্য ডিজিটাল সেবার প্রসার ঘটে এবং তাদের জীবনমানেরও পরিবর্তন হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘নগদ’ গ্রাহক পরিচয় নিশ্চিত করতে ইলেক্ট্রনিক কেওয়াইসি (ই-কেওয়াইসি) চালু করে। ‘নগদ’-এর উদ্বোধনের সময় ‘নগদ’ ছাড়া দেশের আর কোথাও ই-কেওয়াইসি’র প্রচলন ছিল না। এই ই-কেওয়াইসি প্রচলনের ফলে এক দিকে যেমন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খোলার জটিল প্রক্রিয়া সহজতর হয়, অন্যদিকে অ্যাকাউন্ট খোলা সংক্রান্ত খরচও কমে যায়। প্রথম দিকে এই প্রক্রিয়ার সমালোচনা করলেও পরে একে একে সকলে ‘নগদ’-এর উদ্ভাবন অনুসরণ করে। অধিকাংশ ব্যাংক, এমএফএস এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা কোম্পানি ই-কেওয়াইসি’র মাধ্যমে গ্রাহক হিসাব খোলার পদ্ধতি চালু করে সফলতা পাচ্ছে।
ই-কেওয়াইসি হলো– জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই দিকের ছবি তুলে অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড করে অ্যাকউন্ট খোলার পদ্ধতি। কিন্তু দেশে যেহেতু স্মার্টফোনের ব্যবহার অনেক কম, সে কারণে পরে ‘নগদ’ *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খোলার পদ্ধতি চালু করে। এই পদ্ধতিতে যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে *১৬৭# ডায়াল করে চার ডিজিটের পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘নগদ’-এর অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এটি এখনো পর্যন্ত আর্থিক খাতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। একটি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে এমন একটি উদ্ভাবন গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। সে কারণে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশ্বকাপখ্যাত উইটসা ‘নগদ’-কে সম্মাননা জানিয়েছে।
সাধারণ মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তির পাশাপাশি গত এক দশকের বেশি সময় ধরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে বিদ্যমান মনোপলি ‘নগদ’-এর মাধ্যমেই ভেঙেছে সরকার। ফলে এই খাতের লেনদেনে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘নগদ’ শুরু থেকেই সেন্ড মানি বা টাকার লেনদেনকে ফ্রি করেছে। ইউটিলিটি বিলও ফ্রি-তে দেওয়া শুরু করেছে ‘নগদ’। তাছাড়া বাজারে ক্যাশ-আউট চার্জ হাজারে ২০ টাকা হলেও ‘নগদ’ এটি হাজারে ৯ টাকা ৯৯ পয়সায় নিয়ে এসেছে। যা ভ্যাট ট্যাক্সসহ ১১ টাকা ৪৯ পয়সা। এই গ্রাহকবান্ধব ও সাশ্রয়ী সেবার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষেরা ভোগ করতে পারছে বাড়তি সুবিধা। তাই এই সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেক্টরে সরকারের এটিও একটি বড় সফলতা।
‘নগদ’-এর এই সাশ্রয়ী সেবায় কেবল গত এক বছরে প্রচলিত সেবার খরচের তুলনায় ‘নগদ’-এর গ্রাহকেরা সাশ্রয় করতে পেরেছেন এক হাজার কোটি টাকারও বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালু হওয়া একটি সেবা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ মানুষের দিন বদলের ক্ষেত্রে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
করোনা দুর্ভোগের সময় ‘নগদ’-এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাসহ প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য আর্থিক অনুদান ও সহায়তা বিতরণ ডিজিটালাইজড করতে সরকারকে সহযোগিতা করেছে ‘নগদ’। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে সরকার তিন কোটি মানুষকে সাড়ে আট কোটিবার নানান ধরনের ভাতা, উপবৃত্তি ও অনুদান বিতরণ করেছে। যেখানে দুর্নীতি রোধ করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘আমরা চাইছি মানুষের আর্থিক সব সমস্যার সমাধান হোক একটি ওয়ালেটের মাধ্যমেই। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে ‘নগদ’। দেশের সবার আর্থিক সমস্যার সমাধানে কাজ করছি আমরা।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জাতীয় ওয়ালেট হিসেবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ওয়ানস্টপ সেবা দিয়ে যেতে চায় ‘নগদ’। আর সেই লক্ষ্যেই মানুষের জন্য কাজ করছে রাষ্ট্রীয় এই সেবা।
‘নগদ’-এর সূত্র বলছে, এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইলে চারবার করে উপবৃত্তি বিতরণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ৫৮ লাখ দুস্থ ও হতদরিদ্র স্বচ্ছতার সঙ্গে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে ভাতা পেয়েছেন। এই দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসে সরকার।
গ্রাহকবান্ধব স্বল্প মূল্যের সাথে সাথে প্রযোক্তিগত সহজ সেবার কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নগদ। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হচ্ছে সেবাটিতে, যা সরাসরি জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।