আগামী ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগীতার চূড়ান্ত পর্ব ঢাকার চারটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষতা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। দক্ষতাই স্থিতিশীল উন্নয়নের মূল ভিত্তি। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেশের তরুণ সমাজকে দক্ষতা প্রশিক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা, দক্ষতার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের কাজকে গতিশীল করা, বিভিন্ন দেশের সাথে দক্ষতা উন্নয়নের সেতুবন্ধন তৈরি করা এবং ভবিষ্যতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে দেশব্যাপি এ প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয় ।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ ভবন অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগীতা-২০২১ এর সংবাদ সম্মেলন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায় আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ী ৬৬ জন প্রতিযোগী চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করবেন। চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ীরা ২০২২ সালের অক্টোবরে চীনের সাংহাইতে অনুষ্ঠিত ৪৬তম ওয়ার্ল্ড স্কিল কম্পিটিশন ২০২২ এ অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে পারেন। এ সময় প্রতিযোগীতার লোগো উম্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) দুলাল কৃষ্ণ সাহা সভাপতিত্ব করেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যুগ্মসচিব ও সদস্য (নিবন্ধন ও সনদায়ন), মো. নূরুল আমিন, যুগ্মসচিব ও সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) ড. মো. জিয়াউদ্দিন এবং কেএসআরএমের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট উইংয়ের জিএম কর্নেল (অব.) মো. আশফাক উল ইসলাম।
এতে আরও জানানো হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সচেতনামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হয় এবারের প্রতিযোগীতা। দেশের ৮টি বিভাগের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, শিল্প দক্ষতা পরিষদ, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, সংস্থায় পত্র প্রেরণ করা হয়। তাছাড়া ওয়েবসাইট, ফেসবুক, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং এসএমএস এর মাধ্যমে সচেতনামূলক প্রচারনা চালানো হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সারাদেশের এক হাজার ৭০৭ জন প্রতিযোগী অনলাইনে নিবন্ধন করেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগীতা-২০২১ এর সহযোগী আয়োজক ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক (পাওয়ার্ড বাই) কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেড।
বিভাগীয় প্রতিযোগীতা শেষে ১৩ টি ট্রেডে বাছাইকৃত ৬৬ বিজয়ী জাতীয় পর্যায়ের বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগীতা ২০২১-এ অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে এবং ৩০ ডিসেম্বর আগারগাঁওয়ে বিনিয়োগ ভবন অডিটোরিয়ামে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। পরবর্তীতে চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে ছয় মাসব্যাপি গ্রুমিং সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় দক্ষতা প্রতিযোগীতা-২০২১ এর ট্রেডগুলো হলো: কনস্ট্রাকশন
অ্যান্ড বিল্ডিং টেকনোলজি বিভাগে পেইন্টিং অ্যান্ড ডেকোরেটিং এবং প্ল্যাস্টারিং অ্যান্ড ড্রাই ওয়াল সিস্টেম; আইসিটি বিভাগে আইটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ওয়েব টেকনোলজিস, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং সাইবার সিকিউরিটি। ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি বিভাগে ওয়েল্ডিং এবং সোস্যাল অ্যান্ড পার্সোনাল সার্ভিস বিভাগে বেকারি, কুকিং, পেস্ট্রি অ্যান্ড কনফেকশনারি এবং রেস্টুরেন্ট সার্ভিস।
সংবাদ সম্মেলনে দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, কারিগরি দক্ষতা যে কতো গুরুত্বপূর্ণ সেই মানসিকতা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের বিষয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে পাঠ্যক্রমে দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি যুক্ত করতে আমরা কাজ করছি।
এ প্রসঙ্গে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করার জন্য বর্তমান সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা সরকারের ওই পদক্ষেপের অংশীদার হয়ে পাশে আছি সবসময়। আমরা মূলত যৌথভাবে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে কাজ করছি। সহযোগিতা ও উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছি। কারণ দক্ষতাই স্থিতিশীল উন্নয়নের চাবিকাঠি। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদের বিকল্প নেই। তাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে ভুমিকা রাখতে চাই পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যে আমাদের সম্পৃক্ততা এমন আয়োজনে।’
মো. নূরুল আমিন বলেন, আমরা দেশের প্রচলিত দক্ষতা উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনেছি। ইতোমধ্যে ২২৭টি প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আমাদের নিবন্ধনের আওতায় এসেছে। আরও অর্ধশত প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় আছে।
ড. মো. জিয়াউদ্দীন বলেন, আমাদের যে সংখ্যক তরুণ আছে সেটিই আমাদের বড় সম্পদ। প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে আমাদের দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি করা গেলে বিশাল দক্ষ জনগোষ্ঠির একটি অংশ প্রত্যেকে দৈনিক এক ডলার করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করলেও প্রতিদিন এক কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। সুতরাং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই।