২১ মার্চ পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বে সবচেয়ে কম সময়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিমাণের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। কোথাও এত কম সময়ে অত্যাধুনিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নজির নেই।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী এলাকায় ৯৮২ একর ৭৭ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা (২.৪৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার)। বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথ উদ্যোগে নির্মিত। এনডব্লিউপিজিসিএল ও সিএমসির সম-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) গঠিত হয়। তারই অধীনে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ৩৬৩.৭৬ একর জমিতে বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে ‘সবুজায়ন’ করা হচ্ছে। এখানে কয়লা আনলোডের ২৫ একর জায়গায় ৩৮৫ মিটার দীর্ঘ, ২৪ মিটার প্রস্থ এবং ৬.৭ মিটার উচ্চতার জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঘণ্টায় একত্রে চারটি জাহাজ মিলে ৩ হাজার ২’শ মেট্রিকটন মালামাল খালাসের কাজ করতে পারছে। বর্তমানে কয়লা সরাসরি জাহাজ থেকে ঢাকনাযুক্ত কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপিত কয়লা রাখার ডোমে পৌঁছে যাচ্ছে। বাইরে থেকে দেখারও সুযোগ নেই। পরিবেশের কোনো ঝুঁকিও থাকছে না।
প্রতিটি ১.৮০ লাখ টন ধারণ ক্ষমতার চারটি কোল ইয়ার্ড নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৫৭ দিনের কয়লা মজুদ রাখতে পারবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ ছাই ‘এ্যাশ হপারে’ ধরা হবে। সালফার নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ফ্লু গ্যাস ডিসালফারাইজেশন সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ২৯ মার্চ ইপিসি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২টি ইউনিটে বিভক্ত। করোনার ধাক্কা সত্ত্বেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ২০২০ সালের ১৪ মে প্রথম ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আসে। দ্বিতীয় ইউনিটটে একই বছরের আগস্টে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আসে। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে উদ্বোধন বিলম্বিত হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে গৌরব অর্জন করে।
বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সিইও এএম খোরশেদুল আলম বলেন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৩৭ মাসের মধ্য নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে কম সময়ে আধুনিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিমাণের রেকর্ড গড়েছে কোম্পানিটি। আর কোথাও এতো কম সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নজির নেই।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আমরা এক মাহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়েছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা আসছে ২১ মার্চ। সেই সঙ্গে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে কার্যক্রম শুরু করা সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্প পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি ১৩২০ মেগা ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন। বর্তমান দুনিয়ার সর্বাধুনিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অত্যাধুনিক ঢাকনাযুক্ত কোলডোম ব্যবহার করেছে, যার কারণে পরিবেশের ওপর কোন প্রকার বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠি পাবে সবচেয়ে আধুনিক সুযোগসুবিধা। প্রধানমন্ত্রীর এই চিন্তা থেকেই বাস্তবে রূপ নেয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। যা দিনরাত বদলে দিয়েছে পায়রার মানুষের জীবনবোধ, জীবনমান!
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও একটি মাইলফলক ঘোষণা করবেন। এদিন বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করা হবে। এ ঘোষণাটিও আসবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।