ঝুঁকিতে পড়বে শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া-ভুরভুরিয়া চা বাগানের নিরাপত্তা

চা শিল্পাঞ্চল, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 13:25:54

একটি রাস্তাকে ঘিরে ঝুঁকির মুখে পড়তে চলেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে চা কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগান। এতে করে উৎকণ্ঠার মাঝে রয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ভাড়াউড়া চা বাগানে ফাঁড়ি বাগান ভুরভুরিয়া। ভাড়াউড়া এবং ভুরভুরিয়ার যোগাযোগের জন্য সেই বৃটিশ (চা বাগান প্রতিষ্ঠাকালীন) সময় থেকে মাটির কাঁচা সংযোগ সড়ক রয়েছে। যা চা বাগান কর্তৃপক্ষ দীর্ঘকাল যাবত তাদের নিরাপত্তা ও সুবিধার স্বার্থে সেটি ব্যবহারসহ রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে।

সম্প্রতি এই রাস্তাটি পাকাকরণ করা হবে বলে জানা গেছে। তাতেই ঘোর আপত্তি বাগান কর্তৃপক্ষের। নিরবিচ্ছিন্নভাবে চা উৎপাদনে ক্ষতি এবং চা বাগানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে মর্মে রাস্তা পাকাকরণে আপত্তি জানিয়েছে তারা।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ফিনলে চা’র ভাড়াউড়া ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক জিএম শিবলি বলেন, আমাদের ভুরভুরিয়া চা বাগানের বিটিআরআই রাস্তার মুখ হতে ভাড়াউড়া চা শ্রমিক কলোনি পর্যন্ত একটা অত্যন্ত মনোরম ও পরিবেশবান্ধব রাস্তা রয়েছে। যা সম্পূর্ণ ভালো অবস্থায় আছে এবং তা বাগান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এই রাস্তাটি পাকাকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তাতেই আমাদের আপত্তি। কেননা, বাগানের ভিতর দিয়ে পাকা সড়ক নির্মিত হলে শ্রমিকদের নানা সমস্যায় ভুগতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রাস্তাটি পাকা হলে শহর এবং দূর থেকে আগত লোকজন বাগানে যখন-তখন প্রবেশ করবেন। ফলে বাগানের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হবে। শ্রমিকরা নিজ পরিবেশে বাগানের কাজ করে থাকেন। বাগানের ভিতর দিয়ে বাহিরের লোকজন এবং যানবাহন চলাচল শুরু হলে বাগানের প্রাইভেসি দারুণভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থিত সংরক্ষিত বনভূমিও ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে।

এ রাস্তাটি পাকা হলে বিঘ্নিত হবে চা বাগানের নিরাপত্তা। ছবি: বার্তা২৪

‘সবচেয়ে বড় কথা– আমরা বাগানের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে যখন এই পাকা রাস্তা চাচ্ছি না, তখন তারা তা করবেন কেন? এটা তো সম্পূর্ণভাবে আইনের পরিপন্থী’ বলে মন্তব্য করেন ফিনলে মহাব্যবস্থাপক শিবলি।

সরকারি পরিপত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৮ নং শাখায় (তারিখ ৫-৮-৯৬ বাং/১৯-১১-৮৯খ্রীঃ, ভূঃমঃ/শাখাজব/১০৭/৮৮/৬৩০ শীর্ষক পরিপত্র) উল্লেখ আছে, চা বাগানের জমি ও চা বাগান এলাকা দীর্ঘমেয়াদি ইজারার মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত এবং ইহার অভ্যন্তরীণ রাস্তাসমূহও ব্যক্তি মালিকানাধীন। চা বাগানের মধ্যে দিয়ে রাস্তা থাকলে সেগুলির মালিকানাও বাগানের এবং তা রক্ষণাবক্ষেণরে দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট চা বাগানই পালন করেছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এই অবস্থায় চা বাগান ব্যতীত অন্য কোন প্রতিষ্ঠান চা বাগানের ভিতর দিয়ে জনসাধারণে ব্যবহার্য কোন রাস্তা নির্মাণ/ মেরামত করিলে তাতে চা বাগানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

সম্প্রতি সরকারের নজরে এসেছে যে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে দেশের কোন কোন চা বাগানের মধ্য দিয়ে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য রাস্তা নির্মাণ মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপরোক্ত উদ্যোগ অনভিপ্রেত, আইন বহির্ভূত এবং চা বাগানরে সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নয়নের পরপিন্থী।

উপরোক্ত অবস্থায় যেহেতু চা বাগানসমূহের উন্নয়ন এবং চা রফতানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রেখে থাকে এ জন্য সরকার চা বাগান এবং সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত সংরক্ষিত বনভূমির নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় সে জন্য এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নির্দেশ জারি করছে যে, বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বাগানের ভিতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ/ মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ হতে বিরত থাকবেন মর্মে পরিপত্রে উল্লেখ আছে বলে জানান জিএম শিবলি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর