জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্য, ডিজেলে লিটার প্রতি লোকসান যাচ্ছে ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা। ৩ জুনের দর অনুযায়ী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দৈনিক লোকসান দিতে হচ্ছে ৮৯ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫’শ টাকা।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, ৩ জুন ব্যারেল প্রতি দর উঠেছে ১৬৭.১৭ ডলার। প্রিমিয়াম খরচ ২.৮১ ডলার দিয়ে দর দাঁড়াচ্ছে ১৬৯.৯৮ ডলারে। এতে করে লিটার প্রতি আমদানি খরচ পড়ছে ৯৭.৮২ টাকা। ডিজেলের লিটার প্রতি ভ্যাট-ট্যাক্স রয়েছে ১৬.০৭ টাকা, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে ৪.৬৬ টাকা।
আমদানি খরচ, ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্যসহ লিটার প্রতি খরচ দাঁড়াচ্ছে ১১৮.৫৬টাকা। এর বাইরে রয়েছে বিক্রেতার ভ্যাট ১.৫৭ টাকা, বিক্রয় ও বিতরণ মার্জিন ১.৫০ টাকা, খুচরা বিক্রেতার কমিশন ২.৭৯ টাকা, বিপিসির মার্জিনসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে ৫.৮৬ টাকা। সব মিলিয়ে লিটার প্রতি নীট মূল্য দাঁড়ায় ১৩০.৩৫ টাকা। আর এখন ডিজেল খুচরা বিক্রয় হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। বিপিসির মার্জিনসহ লোকসান দাঁড়াচ্ছে ৫০.৩৫ টাকা। বিপিসির মার্জিন বাদ দিলেও লিটারে লোকসান যাচ্ছে ৪৪.৪২ টাকা।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে ডিজেলের। গত ৩ জুন চাহিদা ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার লিটার। তবে এই হিসেবের বাইরে কিছু হিসেব রয়েছে। যেমন দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় যেসব তেল আসছে সেগুলোর তুলনামুলক দর কম। আবার ক্রড অয়েল আমদানি করা হলে পরিশোধন করলে কয়েক টাকা সাশ্রয় হয়। ভ্যাট-ট্যাক্সকে বোঝা হিসেবে দেখছে খোদ জ্বালানি বিভাগ। তারা মনে করছে ডিউটি সহনীয় পর্য ায়ে নামিয়ে আনা গেলে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসতো। না হলে বিপিসি কতদিন লোকসান দিয়ে চলবে!
আসছে দিনে চরম সংকট দেখছে বিপিসি। তারা মনে করছে এই অবস্থা থাকলে বেশিদিন বর্তমান দরে বিক্রি করা সম্ভব হবে না। এক সময় হয়তো দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প থাকবে না।
বিপিসির জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) এটিএম সেলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, অকটেনে লিটার প্রতি ৩৪ টাকার মতো লোকসান দিতে হচ্ছে, পেট্রোল ও জেট ফুয়েলও ব্রেক ইভেনে বিক্রি করা হচ্ছে। প্লেনের জ্বালানি জেট ফুয়েল অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটের জন্য লিটার প্রতি ১০৬ টাকা দরে এবং আন্তর্জাতিক রুটের জন্য ১.০৯ ডলার দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিপিসির এই জেনারেল ম্যানেজার বলেন, মন্ত্রণালয় নিয়মিত খবর নিচ্ছে। দাম পুর্ননির্ধারণের বিষয়ে এখন কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি একটি জটিল আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে জ্বালানির দামের অবস্থা খুবই অস্থিতিশীল। একদিকে যখন দাম ইস্যু একই সময়ে পণ্য পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বিশ্বের অনেক দেশে জ্বালানির সংকট চলছে। ভবিষ্যতে টাকা হলেই যে বিদেশ থেকে নিশ্চিত তেল কেনা যাবে সেই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। আমাদের দেশে কোন সংকট নেই, সরকার চেষ্টা করছে জনগণের নাগালের মধ্যে রাখতে। তবে ভোক্তাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। আমাদের সাশ্রয়ী হওয়া উচিত।