লোডশেডিংয়ে নাকাল অবস্থার মধ্যেই বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর তোড়জোড় অব্যহত রেখেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। অন্যদিকে খুচরা দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোর আগ্রহ না থাকলেও বিইআরসির আগ্রহটাই বেশি দৃশ্যমান।
সুত্র জানিয়েছে, বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রস্তুত করে রেখেছে। সিগন্যাল পেলেই যাতে দ্রুত আবেদন দাখিল করা যায়।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল পাইকারি দাম বৃদ্ধির শুনানিতে প্রকাশ্যই বলেছিলেন, পাইকারি দাম ঘোষণা হলে খুচরার উপর প্রভাব পড়বে। খুচরার বিষয়ে কোন প্রস্তাব আমরা পাইনি। বিইআরসি চেয়ারম্যান অনেকটা প্রথা ভেঙ্গেই বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাশা করেছিলেন। তার যুক্তি ছিল পাইকারি দাম বাড়লে বিতরণ কোম্পানি সেই অর্থ যোগান দিতে সংকটে পড়বে। তাই যাই হোক একসঙ্গে করতে চায় বিইআরসি।
বিইআরসি চেয়ারম্যান গত ১৮ মে গণশুনানিতে আহ্বান জানালেও বিতরণ কোম্পানিগুলো তাতে সাড়া দেননি। অন্যদিকে আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে পাইকারি দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বিধান রয়েছে গণশুনানি থেকে ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।
কমিশনের সদস্য আবু ফারুক বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমাদের হাতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেভাবেই কাজ এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বর্তমান দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করে। বিপিডিবির এই প্রস্তাব গ্যাসের আগের দর ইউনিট প্রতি ৪.৪৫ টাকা বিবেচনায়। ওই প্রস্তাবের পর ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হয়েছে ৫৭ পয়সা করে। বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি ভর্তুকি ছাড়া ৮.১৬ টাকা করার মতামত দেয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিট প্রতি ৫.১৭ টাকা নির্ধারণ করে। বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বিপিডিবি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি ও বেসরকারি মালিকানাধীন কেন্দ্রের কাছ থেকে কিনছে। ৫টি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করে আসছে। বিপিডিবি নিজে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের শহরাঞ্চলে বিতরণ করে যাচ্ছে।
বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে বিপিডিবির।
বিপিডিবির যখন এই অবস্থা বিতরণ কোম্পানিগুলোর আগ্রহী নয় দাম বাড়াতে। ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পাইকারি দাম না বাড়লে আমাদের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা একটি প্রস্তাব রেডি করে রেখেছি। যাতে উপর থেকে সিগন্যাল পেলেই দ্রুত জমা দিতে চাই।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা দাম বাড়ানোর পক্ষে নই। গত অর্থবছরে আমাদের লোকসান হয়েছে ৫’শ কোটি টাকার মতো। একই বছরে ৪ হাজার কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করেছি। সে হিসেবে ইউনিট প্রতি ১৩ পয়সার মতো ঘাটতি রয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম বিদ্যুতের বিক্রি বাড়লে ঘাটতি কমে আসবে। কিন্তু কোন কোন জায়গায় এখন ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এতে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। আমরা একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করে রেখেছি। সেখানে ১৩ পয়সার মতো চাওয়া হতে পারে, পাইকারি দাম বাড়লে সেইটা যোগ করার প্রস্তাব থাকবে। বিপিডিবি আগে জমা দিক তারপর আমরা জমা দিতে চাই।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। বিপিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, তাদের খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব রেডি করা হয়েছে। যে কোন দিন বোর্ডের অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। বোর্ড অনুমোদন দিলেই বিদ্যুৎ বিভাগকে অবগত করে বিইআরসিতে প্রেরণ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, খুচরা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কবে পাঠানো হবে সে বিষয়ে বিপিডিবি ভালো বলতে পারবেন।