শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। পরিদর্শনকালে তিনি বহুতল ভবনের জন্য ওয়ালটনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির লিফট, জেনারেটর, এয়ারকন্ডিশনারসহ রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসর, মেটাল কাস্টিং, ক্যাবল ইত্যাদি প্রোডাকশন প্ল্যান্ট ঘুরে দেখেছেন। সে সময় প্রতিমন্ত্রী ওয়ালটন হেডকোয়ার্টারে নির্মিয়মান ১৫ তলা বিশিষ্ট লিফট টেস্টিং টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওয়ালটনের বহুমাত্রিক সুশৃঙ্খল উৎপাদন ব্যবস্থায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দুপুরে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার পরিদর্শনে যান প্রতিমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ভাইস চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও গোলাম মুর্শেদ।
সে সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. শওকত আলী, ওয়ালটনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হুমায়ূন কবীর, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক কর্নেল (অব.) শাহাদাত আলম, ফিরোজ আলম, তানভীর রহমান, ইউসুফ আলী, সোহেল রানা ও ইয়াসির আল ইমরান, নির্বাহী পরিচালক শাহজালাল হোসেন লিমন, আবদুল্লাহ আল মামুন, জাহিদুল ইসলাম, মোহসিন আলী মোল্লা, শাহজাদা সেলিম প্রমুখ।
হেডকোয়ার্টার প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রতিমন্ত্রী প্রথমে ওয়ালটনের বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর নির্মিত ভিডিও ডক্যুমেন্টারি উপভোগ করেন। এরপর তিনি ওয়ালটনের সুসজ্জিত প্রোডাক্ট ডিসপ্লে সেন্টার ঘুরে দেখেন। পরে প্রতিমন্ত্রী ওয়ালটনের বিভিন্ন প্রোডাকশন প্ল্যান্ট সরেজমিনে দেখতে যান।
পরিদর্শন শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ফ্রিজ-টিভির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন করছে ওয়ালটন। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা ওয়ালটনের উত্তরোত্তর সফলতা ও উন্নতি কামনা করি।
বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং ডলার রেটের উত্থান-পতনে দেশীয় উদ্যোক্তরা যেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সেজন্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
তিনি বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য উৎপাদন এবং রফতানির স্বাভাবিক ধারা যাতে অব্যাহত থাকে সেদিকে প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখছেন। এতে করে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্সসহ অন্যান্য পণ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদিত পণ্য বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স পণ্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাতে ব্যবহৃত হয়, সে বিষয়ে আমাদের সরকার প্রাধান্য দিচ্ছে। এতে করে দেশীয় শিল্পের বিকাশ দ্রুততর হবে।
জানা গেছে, বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে ওয়ালটন একটি প্রশংসিত নাম। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সুবিশাল এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার। এখানে ফ্রিজ, টিভি, এসি, কম্প্রেসর ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, হোম ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশনস, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন উচ্চমানের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য তৈরি হচ্ছে।
এর পাশাপাশি ২০১৯ সাল থেকে ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক মানের লিফট তৈরি ও বাজারজাত করছে ওয়ালটন। বাংলাদেশে তৈরি লিফট দিয়ে স্থানীয় চাহিদার সিংহভাগ মেটানোর সক্ষমতা রয়েছে ওয়ালটনের। আন্তর্জাতিক টেস্টিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লিফট বাজারে ছাড়ছে ওয়ালটন। বর্তমানে ৩০০ কেজি থেকে ৩,০০০ কেজি পর্যন্ত ধারণক্ষমতার প্যাসেঞ্জার লিফট রয়েছে ওয়ালটনের। আর ওয়ালটনের কার্গো লিফটের ধারণক্ষমতা ৮০০ কেজি থেকে ৪,৫০০ কেজি পর্যন্ত। ওয়ালটন লিফটে রয়েছে পাঁচ বছরের কিস্তি সুবিধা।
‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা বুকে নিয়ে ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিক মানের পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশি পণ্য দিয়ে এবার বিশ্বজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ালটন। এজন্য তারা নির্ধারণ করেছে ‘ভিশন গো গ্লোবাল-২০৩০’। অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত হতে ব্যাপকভাবে কাজ করছে ওয়ালটন। দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্পের এই অভাবনীয় অগ্রগতি দেখার উদ্দেশ্যে ওয়ালটন হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন করেন প্রতিমন্ত্রী।