বেপরোয়া তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বিইআরসির (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) নির্দেশকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। লাইসেন্সবিহীন সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধে ৮ দফায় চিঠি দিলেও কোনই ব্যবস্থা নেননি।
তিতাস গ্যাস ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এমন বেআইনি কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ জানিয়েছে বিইআরসির সদস্য মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, বিইআরসি আইন ২০০৩ ও গ্যাস আইন ২০১০ অনুযায়ী বিইআরসির লাইসেন্স ছাড়া সিএনজি স্টেশন পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে শতাধিক ফিলিং স্টেশন। ওইসব সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০১৪ সালে প্রথম চিঠি দেওয়া হয়। এরপরও দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তিতাসের সাড়া মিলছে না।
বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ চিঠি দেওয়া হয় চলতি বছরের ২০ জুন (স্মারক-২৭১৯)। এর আগে একই ইস্যুতে ২০২১ সালে ৩ দফায় চিঠি (২৭ জানুয়ারি, ২১ জুন ও ২১ সেপ্টেম্বর) দেওয়া হয়েছিল তারও কোন জবাব পাওয়া যায়নি। ২০২০ সাল, ২০১৮ ও ২০১৫ সালেও চিঠি দেওয়া হয়। তখনও তিতাস গ্যাস কোন উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে বেআইনিভাবে শতাধিক সিএনজি ফিলিং স্টেশন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্যাসের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানিটির অধীনে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে ৩৯৬টি।
সর্বশেষ চিঠিতে বিইআরসি লিখেছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের আইন ২০০৩ এর ধারা ২৭(১) অনুযায়ী সিএনজি মজুদকরণ ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিইআরসি হতে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। তাছাড়া গ্যাস আইন ২০১০ এর ধারা ৮(১) অনুযায়ী কমিশনের নিকট থেকে লাইসেন্স গ্রহণপূর্বক সিএনজি রিফুলিং স্টেশনের ব্যবসা শুরু করতে পারবে মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। ফলে অনেক সিএনজি ব্যবসায়ী লাইসেন্স গ্রহণ করলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ী লাইসেন্স গ্রহণ করেননি। যা বিইআরসি ও গ্যাস আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যা একই আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
চিঠির সঙ্গে ঢাকার ৪০টি, নারায়ণগঞ্জের ১৫টি, নরসিংদীর ১০টি, গাজীপুরের ১০টি মুন্সীগঞ্জের ২টিসহ তিতাসের মোট ৭৯টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের নাম উল্লেখ করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। তারপরও কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমরা সম্প্রতি চিঠি দিয়েছি সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে।তাদেরকে ১০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে, এরমধ্যে লাইসেন্স না নিলে লাইন কেটে দেওয়া হবে।
২০১৪ সাল থেকে ৮ দফায় চিঠি দিয়েছে বিইআরসি। এতোদিন ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ কি? জবাবে তিনি বলেন, বিইআরসি নিজেও তো লাইন কাটতে পারে, আমাদের ওপর ঠেলে দেয় কেনো। তিতাস গ্যাস হচ্ছে বিতরণ কোম্পানি, বিইআরসি কি পারে লাইন কাটতে এমন প্রশ্নের জবাবে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তারা তো জরিমানা করতে পারে। জরিমানা করে না কেনো।
তিতাস গ্যাসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন হারুনুর রশীদ মোল্লাহ। আইনের তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়ালখুশিতে চলছেন। বিইআরসির আদেশ ছাড়াই প্রি-পেইড মিটারের মাসিক ভাড়া ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করেছেন। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা মূল্যে যে প্রি-পেইড মিটার পাওয়া যায়, সেই মিটার কিনেছেন ২৩ হাজার টাকা করে।
তিতাস গ্যাস এখন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। ক্যাপটিভ পাওয়ারে গ্যাস সংযোগ বন্ধে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। পূর্বের সংযোগে ঢালাওভাবে লোড বৃদ্ধিসহ নতুন নতুন সংযোগ প্রদান করে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তিতাসের বিরুদ্ধে। এতে করে সরকার দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, দুই গ্যাসের অপচয়। ক্যাপটিভে ১ মিলিয়ন গ্যাস দিয়ে ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। একই পরিমাণ গ্যাস কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা গেলে ৬ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব।