বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) লাইসেন্স ইস্যু শুরুই করেনি। অথচ তাদের লাইসেন্স দিয়ে সাভারে ৪টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের পুনঃসংযোগের ঘটনার বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
সাভার জোনের ডিজিএম অজিত কুমার দেব বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমি নিজে সম্ভার সিএনজি ফিলিং স্টেশনের লাইসেন্স দেখেছি, তারা ফরওয়ার্ডিংসহ দিয়েছি, বারকোড দিয়ে যাচাই করেছি, তারপর সংযোগ দিয়েছি। মানিক সিএনজি ও সাভার সিএনজি লাইসেন্স পেয়েছে। অন্যদেরগুলো ম্যানেজার দেখেছে তিনি ভালো বলতে পারবেন। তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে বিইআরসির লাইসেন্স দেখে সংযোগ দিতে। লাইসেন্স পেলে আমাকে না জানালেও চলবে।
কিছুক্ষণ পর খোঁজ নিয়ে অজিত কুমার দেব জানান, নবীনগর ও দুবাই সিএনজি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, ওরা এখনও লাইসেন্স পায়নি। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
তবে বিইআরসির একাধিক সূত্র দাবি করেছে, এখনও কার্যপত্রই অনুমোদন হয়নি, তাহলে লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার প্রশ্নও ওঠে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) লাইসেন্স না থাকায় সম্প্রতি বেশ কিছু সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরপর লাইসেন্সের জন্য ভিড় জমায় বিইআরসি।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিইআরসির কমিশনের বৈঠকে ৪৭টি লাইসেন্সের আবেদন উপস্থাপন করে। এরমধ্যে ৪০টি আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকায় লাইসেন্স ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। কমিশনের ওই সভার কার্যপত্র এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি।
বিইআরসির সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু ফারুক বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমার কাছে কার্যপত্র এসেছে। ৪০টি ফাইল পরীক্ষা দেখতে সময় লাগছে, আমি প্রায় শেষ করে এনেছি, কালকে (২৭ সেপ্টেম্বর) হয়তো স্বাক্ষর হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কার্যপত্র স্বাক্ষরের পর লাইসেন্স ইস্যু শুরু হবে। এখনও লাইসেন্স ইস্যু শুরু হয়নি। সাভার অঞ্চলে পুনঃসংযোগ দেওয়ার বিষয়টি জানালে বলেন, এটা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। নির্দিষ্ট করে কোন তথ্য প্রমাণ থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর বেশকিছু ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এরমধ্যে সাভার অঞ্চলেই ১৪টি। দ্রুত লাইসেন্স পেতে প্রতি দিনই লোকজন ধর্না দিচ্ছে কমিশনে। কমিশন অন্যান্য কাজ রেখে গভীর রাত পর্যন্ত লাইসেন্সের কাজ করতে দেখা গেছে। লোকবল সংকটসহ নানা কারণে এখনও শেষ করে আনতে পারেনি।
সোমবারও (২৬ সেপ্টেম্বর) অনেককে বলা হয়েছে কার্যপত্র হয়ে গেলেই লাইসেন্স পাবেন। এনিয়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। তবে তারা একে নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সাভার অঞ্চলে ২৫ সেপ্টেম্বরেই কয়েকটি ফিলিং স্টেশনে সংযোগ দেওয়ার খবরে অনেকেই বিইআরসির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, আমাদের বলা হচ্ছে লাইসেন্স দেওয়া শুরু হয়নি, দেওয়া হবে। আবার কাউকে দেওয়া হচ্ছে, কিসের ভিত্তিতে। নিশ্চয় তাদের সঙ্গে কমিশনের যোগসাজশ রয়েছে, না হলে এতো বড় মিথ্যা কথা বলার সাহস পায়কি করে।
ইদানিং কমিশনের কিছু কর্মকর্তার ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কমিশনের মিটিংয়ে অনুমোদন হয়নি তার আগেই পেট্রোলিয়ামের লাইসেন্স একটি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি কমিশনের চেয়ারম্যানের নজরে এলে ৫ জনকে শোকজ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করে অংকুরেই দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে বিইআরসি তার ভাবমুর্তি ধরে রাখতে ব্যর্থ হবে।
বিইআরসি আইন ২০০৩ ও গ্যাস আইন ২০১০ অনুযায়ী বিইআরসির লাইসেন্স ছাড়া সিএনজি স্টেশন পরিচালনা করার কোন সুযোগ নেই। লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে শতাধিক ফিলিং স্টেশন। ওইসব সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০১৪ সালে প্রথম চিঠি দেয় বিইআরসি। এরপরও মোট ৮ দফায় চিঠি দেওয়া হলেও তিতাসের সাড়া দিচ্ছিল না। ৬ সেপ্টেম্বর বার্তা২৪.কম-কে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। নিউজের পর কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে নবায়নের মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে তিতাস।
অথচ বিইআরসির নির্দেশনা ছিল যারা একবারেই নেয়নি, তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতি জোর দিতে। পাবলিকের অসন্তোষ সৃষ্টির জন্য তিতাস এমডি কৌশলী চাল খেলেছেন বলে মনে করেন বিইআরসির অনেকেই।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ।