সোমবার (১০ অক্টোবর) রাত থেকেই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করবে। ঘোড়াশালে একটি উপকেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পূর্বাঞ্চলের সারপ্লাস বিদ্যুৎ পশ্চিমাঞ্চলে আনতে না পারায় পরিস্থিতি বেশি অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান।
সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে তার নিজ অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন।
সচিব বলেন, পূর্বাঞ্চলে ১১’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রয়েছে। কিন্তু ঘোড়শাল উপকেন্দ্রের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আনা যাচ্ছে না। সোমবার বিকেলের মধ্যেই উপকেন্দ্রটি চালু হবে। ওই ১১’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রিডে বাড়তি যোগ হবে। এতে করে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, গ্যাস সরবরাহ কম পাচ্ছি, এতে করে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসে থাকছে। কয়লা সংকটের কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ যে কারণে সংকটটা বেড়েছে। করোনার কারণে বড়পুকুরিয়ার কয়লা উত্তোলন বন্ধ ছিল। সেখানে আবার কয়লা উত্তোলন শুরু হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হবে। ধারণা করা হচ্ছে শিগগিরই ব্লাক আউটের (৪ অক্টোবর) পুর্বেই অবস্থায় যেতে পারবো।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, অস্থিতিশীল বিশ্ব পরিস্থিতির প্রভার পড়েছে জ্বালানি খাতে। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। চেষ্টা চলছে দ্রুত উন্নতি করার জন্য। এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পর্ট মার্কেট থেকে আমদানি বন্ধ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে, এতে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকছে। গ্যাস সরবরাহে আমরা শিল্পকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। অন্যদিকে তেলের দামও ঊর্ধ্বমূখী। আমরা একটি বাজে সময় পার করছি।
প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, সাধারণ ছুটির দিনে এবং মধ্যরাতে লোডশেডিং কম হতো। এখন কেনো কিছুই মানছে না লোডশেডিং। জবাবে বলেন, দিনের চাহিদা সামাল দিতে রাতে যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো হতো সেগুলো চালাতে হচ্ছে। এতে করে রাতে গিয়ে ঘাটতি হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বিদ্যুতের ব্যবহারের পূর্বের যে প্যাটান ছিল এখন সেটি অনেকটাই বদলে গেছে। আগে রাত বাড়তো আর চাহিদা কমে আসতো, এখন রাত ১০টার পর থেকে চাহিদা বাড়তে থাকে, রাত একটার দিকে গিয়ে অনেক বেড়ে যায়। যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্যাটারি চালিত যারবাহনগুলো এর প্রধান কারণ। সারাদিন চালিয়ে রাতে চার্জে বসাচ্ছে, রাত যতো গভীর হচ্ছে ততো লোড বেড়ে যাচ্ছে। এ কারনে রাতেও লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ গত ১৮ জুলাই ঘোষণা দিয়েই লোডশেডিং শুরু করে। তখন বলা হয়েছিল, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমধাপে ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। এতে সামাল দেওয়া না গেলে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। তখন এও বলা হয়েছিল সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ লোডশেডিং কমে আসবে। পরে বলা হয় অক্টোবর মাসে আর লোডশেডিং থাকবে না।
অক্টোবর মাসে সকলেই যখন লোডশেডিং মুক্ত আশা করেছিলেন, তখন উল্টো মাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত ৪ অক্টোবর দুপুরে ব্লাক আউটের ঘটনা ঘটে। এতে দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়ে। সেই থেকে সব এলোমেলো হয়ে পড়েছে। এখন আর সকাল দুপুর রাত কিছুই বাদ যাচ্ছে না। খোদ রাজধানীতেই কোন কোন এলাকায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ। নিকট অতীতে এমন বাজে অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় নি বলে গ্রাহকরা দাবি করেছেন।
কয়েক দিন ধরেই লোডশেডিংয়ের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, বিতরণ সংস্থাগুলো সূচি মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, ১১ অক্টোবর সর্বোচ্চ চাহিদার প্রক্কলন করা হয়েছে ১৪২০০ মেগাওয়াট, আর সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১২৬৮৬ মেগাওয়াট। ঘাটতি ১৫১৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হবে। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওই তথ্যকে বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। তারা বলেছেন, চাহিদার যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে। যে কারণে বিতরণ সংস্থাগুলো ঘোষিত লোডশেডিং সিডিউল যথাযথভাবে অনুসরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।