বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) দোষারোপ করেছে বিপিডিবি ও পেট্রোবাংলা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দু’টির এমন অভিযোগের বিষয়ে বিইআরসির বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক।
রোববার (৬ নভেম্বর) বিইআরসির সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চান বাংলাদেশে সফররত আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। আইএমএফের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকটি সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত চলে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকটি দুপুর দেড়টায় শুরু হয়ে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলটি ইতিপূর্বে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), পেট্রোবাংলা, বিভিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেসব বৈঠকে দাম বৃদ্ধি না করায় বিইআরসিকে পরোক্ষভাবে দোষারোপ করা হয়েছে। প্রতিনিধি দল দু'টি ওইসব অভিযোগের বিষয়ে বিইআরসির বক্তব্য জানতে চেয়েছিল। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করার কারণ জানতে চেয়েছিল আইএমএফ। বিইআরসি তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে, প্রথমত দাম বৃদ্ধির প্রভাবের বিষয়ে বিপিডিবির প্রস্তাবে কোন সমীক্ষা ছিল না। পাইকারি দাম বৃদ্ধি হলে বিতরণ কোম্পানিগুলো সংকটে পড়তো। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বেশি প্লান্ট ফ্যাক্টরে চালানো গেলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কম চালানো এবং স্পর্ট মার্কেটের এলএনজি আমদানি বন্ধ থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের আলোচনা পর্বে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির প্রিপেইড মিটার প্রকল্পে আপত্তি প্রদান এবং কোম্পানিটির হুইলিং চার্জ কমানোর কারণ জানতে চাওয়া হয়। জবাবে বিইআরসি বলেছে, বিশ্বব্যাংক যদি আজকেই অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করে তবুও দেড় লাখ মিটার স্থাপনে সময় লাগবে কমপক্ষে ৪ বছর। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে ইতিপূর্বে কেনা মিটারে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। যে মিটার বাজারে ৪০ থেকে ৫০ ডলারে পাওয়া যায়, সেই মিটারে ব্যয় হয়েছে ৪০০ ডলার। আমরা গ্রাহকদের উপর এই বোঝা কেনো চাপাবো। গ্রাহক যাতে খোলা বাজার থেকে মিটার কিনে বসাতে পারেন, সেজন্য নীতিমালা করা হয়েছে। এতে কম খরচে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মিটার স্থাপন করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাংকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিকে না দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহককে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নিতে পারে।
বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ধীরগতির কারণ জানতে চেয়েছিলেন বিশ্বব্যাংক। বিইআরসি এ জন্য খানিকটা বিশ্বব্যাংকের কাঁধে দায় দিয়েছে। বিইআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, তোমরা এক সময় বাংলাদেশ থেকে গ্যাস রফতানির সুপারিশ নিয়ে এসেছিলে। তখন বলা হয়েছিল আমরা গ্যাসে ভাসছি, গ্যাস রফতানি করা না হলে কোন সহায়তা দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ যখন প্রস্তাবে রাজি হয়নি তখন দীর্ঘদিন অর্থায়ন বন্ধ রেখেছে। বিশ্বব্যাংক তখন কয়েক বছর পেট্রোবাংলাকে এড়িয়ে চলেছে। এতে করে অর্থায়ন সংকটে পেট্রোবাংলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা দাবি করা হয় বিইআরসির পক্ষ থেকে।
বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, তারা ক্রসবর্ডার ইলেকট্রিসিটি বিষয়ে আলোচনা করেছে। দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আওতায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিদ্যুৎ কেনাবেচার একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা যায় কিনা। যেখান থেকে যে কারো কেনা কিংবা বিক্রি করার সুযোগ থাকবে। তাদের এসব প্রশ্নের জবাবে আমরা বলেছি বিষয়টি সরকারের নীতি সিদ্ধান্তের বিষয়। এতে যদি আইনের কোন সংশোধন করতে হয় তাহলে তাই করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বজলুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রিপেইড গ্যাস মিটারের একটি প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আলোচনায় তুলেছিল। তারা বিইআরসির অবস্থান জানার চেষ্টা করেছে। বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী এ বিষয়ে তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
সম্প্রতি আইএমএফ এর কাছে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এই সহায়তা চাওয়ার পর আইএমএফ অর্থনৈতিক নানা খাতে সংস্কারের কথা বলছে। বিশেষ করে বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি কমাতে বলছে প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে জ্বালানি এবং বিদ্যুতে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে আইএমএফ।
মিশন প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলটি আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। বাংলাদেশ সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য এ মিশন ঢাকায় এসেছে।