অবশেষে কেজিডিসিএল এমডিকে অপসারণ করা হয়েছে

বিদ্যুৎ-জ্বালানী, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 15:56:45

অবশেষে কেজিডিসিএল’র (কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ওই কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে।

পেট্রোবাংলা ১৯ নভেম্বর এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দেন। চলতি দায়িত্ব পাওয়া রফিকুল ইসলাম রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (কারিগরি ক্যাডার) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পেট্রোবাংলার আদেশে বলা হয়েছে, রফিকুল ইসলামকে চলতি দায়িত্ব হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হলো। উক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কোন কর্মকর্তা, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি পদায়ন করা হলে রফিকুল ইসলাম পুর্বের পদে ফিরে যাবেন।

এমএ মাজেদকে ওএসডি করে পেট্রোবাংলায় আনা হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শিগগিরই বড় ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানিয়েছে।বন্দরনগরী চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে থাকা কেজিডিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর ঘুষ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েন এমএ মাজেদ। আইনকানুনের কোন বালাই ছিল না তার কাছে। টাকা ঢাললেই সবকিছু মেলে, রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানাতে সিদ্ধহস্ত। কোন কোম্পানির আবেদন কয়েক বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। কেউ কেউ কর্ণফুলীতে ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলেছেন তবুও সংযোগ পাননি। আবার ঘুষ ঢালায় একদিনেই সংযোগ পাওয়ার নজীর তৈরি করেছেন।

আরও পড়ুন: কেজিডিসিএল এমডি এমএ মাজেদ শিগগিরই শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন!

মেসার্স মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স লিমিটেড (গ্রাহক সংকেত শিল্প-৫১৫১) আবেদন করেছেন ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর। পর দিনেই (২০ ডিসেম্বর) তাকে সংযোগ প্রদান করা হয়। সব ধরনের আইন অমান্য করে মাত্র সেই সংযোগটিও প্রদান করা হয়েছে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ক্যাপটিভ পাওয়ারে। মেসার্স মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্স লিমিটেড ৯০০কিলোওয়ার্ট ক্ষমতার ক্যাপটিভের আবেদনটি বোর্ডে তোলার বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু সেই বিধি নিষেধ না মেনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদ মোটা অংকের বিনিময়ে নিজেই অনুমোদন দিয়েছেন।

পেট্রোবাংলা গঠিত উচ্চ পর‌্যায়ের কমিটি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ড সভার অনুমোদন না নিয়ে নিজেই অনুমোদন করেছেন। একই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও একটি জালিয়াতির তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে কোম্পানিটি মিটার টেম্পারিং করে বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরির ঘটনা ঘটলেও ধামাচাপা দিয়েছেন এমএ মাজেদ সিন্ডিকেট। কোম্পানিটিতে পরীক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বিভাগ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র মার্কেটিং বিভাগকে দিয়ে ত্রুটিপুর্ণ মিটার পর‌্যবেক্ষণ কমিটি গঠনও রহস্যজনক। ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার আস্থাভাজনদের রেখেছেন ওই কমিটিতে। যাতে সুবিধামতো রিপোর্ট দিয়ে টুপাইস হাতানো যায়।

৫ কোটি ৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বকেয়ার কারণে মোস্তফা পেপার কমপ্লেক্সের একটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। নিয়ম রয়েছে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং অবশিষ্ট টাকা কিস্তিতে আদায়ের শর্তে পুনঃসংযোগ দিতে পারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু কোন টাকা আদায় না করেই পুনঃসংযোগ প্রদান করেন।

আরও পড়ুন: কর্ণফূলী গ্যাসে বড়চোরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ছোট চোরের বিচারের

মেসার্স ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড (গ্রাহক সংকেত ৮০৬৫) নামের একটি প্রতিষ্ঠানে সংযোগ প্রদানে অভিনব জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সংযোগের জন্য আবেদন জমা দিলে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর বোর্ডে তুলেছিলেন তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সেই বোর্ড সংযোগটি অনুমোদন করেন নি। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় জানার পরও বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই গত বছরের ৫ ডিসেম্বর ডায়মন্ড সিমেন্টকে সংযোগ প্রদান করেছেন এমএ মাজেদ। এতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পরিপত্র অমান্য করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেছে।

বোর্ডের সিদ্ধান্ত জালিয়াতির প্রমান পেয়েছে কমিটি। দেখা গেছে বোর্ডে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে এক রকম, আর কার‌্যপত্রে লেখা হয়েছে ভিন্নভাবে। ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১৭৫তম বোর্ড সভায় ওঠে মেসার্স সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (সাদ মুছা গ্রুপ) নতুন সংযোগের আবেদন। পর্ষদের সভার পুর্বেই ওই গ্রাহকের অনুকূলে চাহিদাপত্র ইস্যু করার তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে।

কেজিডিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দুর্নীতির রামরাজত্ব তৈরি করেছেন। সামান্য কিছু উদাহরণ সামনে এলেও আরও পুকুর চুরির ঘটনা থেকে গেছে অন্তরালে। শুধু সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে জালিয়াতি করে থেমে থাকেনি এম এ মাজেদ। কোম্পানির সিনিয়র সিলেকশন কমিটির (২০২১ সালের ২১ ও ২২ ডিসেম্বর) সভায় ১৭ পদের বিপরীতে ১৩ জনকে সহকারী ব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতির সুপারিশ দেয়। তারপর সেই পদোন্নতি আটকে রাখেন এম এ মাজেদ। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন: দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত কর্ণফুলী গ্যাসের এমডিকে শোকজ করেছে পেট্রোবাংলা

এ সম্পর্কিত আরও খবর