কেজিডিসিএল এমডি এমএ মাজেদ শিগগিরই শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন!

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কেজিডিসিএল এমডি এমএ মাজেদ শিগগিরই শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন!

কেজিডিসিএল এমডি এমএ মাজেদ শিগগিরই শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন!

কেজিডিসিএল (কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদ ও কোম্পানি সচিব ফিরোজ খানের বিভাগীয় মামলায় প্রক্রিয়া শেষ ধাপে পৌঁছে গেছে। তারা এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই শাস্তির আওতায় চলে আসবে বলে পেট্রোবাংলা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শোকজ করা হলে তারা প্রথম দফায় সময়ের আবেদন করেছিল। এতে করে কিছুটা সময় পিছিয়ে যায়। পরে শোকজের জবাব দিলে, তা সন্তোষজনক না হওয়ার পরবর্তী ধাপে রয়েছে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞাপন

পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছি। প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এখনই এর বেশি মন্তব্য করতে পারছি না। চূড়ান্ত হলে অবশ্যই জানতে পারবেন।

কেজিডিসিএল এর আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার পদক্ষেপকে দায়সারা মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুই দফা তদন্তে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অসংখ্য তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরও স্বপদে বহাল রাখার ঘটনা নজীর বিহীন বলে মন্তব্য করেছেন তারা। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদ, সিন্ডিকেটের প্রধান কোম্পানি সচিব ফিরোজ খান ও অন্যতম সহযোগি জিএম সফিউল আজম খান, জিএম আমিনুর রহমান ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছেন। নিচের দিকে কয়েকজনের ইনক্রিমেন্ট স্থগিত ও আইওয়াসের জন্য কয়েকজনের ডেস্ক পরিবর্তন করা হয়েছে। ইনক্রিমেন্ট গুরুদন্ড হলেও দপ্তর বদল একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতো মহাজালিয়াতির পরও তাদের এমন আস্ফালন অন্যদের হতাশ করে। সৎ কর্মকর্তারা কাজ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেন, নষ্ট হয়ে পড়ে চেইন অব কমান্ড।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পেট্রোবাংলা কয়েক বছর ধরে শুধু তদন্তেই করে গেলো। শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে জনমনে। তারা যদি আন্তরিক হতো, প্রথম তদন্তের পরেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। এখনও তাদের বহাল রেখে সঠিক বিচার আশা করা কঠিন। ওরা ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য আরও জালিয়াতি করতে পারে। আগেও যেভাবে রেজিস্টার কাঁটাছেড়া করেছে, আরও করতে পারে। তাই ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হলে তাদেরকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া জরুরি।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বার্তা২৪.কমকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, এক কোম্পানি থেকে সরিয়ে অন্য কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়াকে আমি শাস্তি মনে করি না। আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। পেট্রোবাংলা থেকে ডেপুটেশনে থাকা দুই কর্মকর্তাকে (ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদ, কোম্পানি সচিব ফিরোজ খান) আমার স্বাক্ষরে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন জবাব দাখিলের সময় সীমা শেষ হয় নি।

তিনি বলেন, ডিপির (বিভাগীয় ব্যবস্থা) ক্ষেত্রে যদি কোন অনিয়ম হয়, উভয় ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা্র ব্যবস্থা রয়েছে। যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তিনিও যেমন আওতাভুক্ত, তেমনি আমারও জবাবদিহিতার জায়গা রয়েছে। অতএব কোন দিক থেকেই অনিয়মের সুযোগ নেই। একটি কথা বলতে পারি কেউ কোন অপরাধ করলে আমার সময়ে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই।

কেজিডিসিএল’র দুর্নীতির বিষয়ে সর্বশেষ কমিটি গঠন (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২)  করা হয় তৎকালীন পরিচালক (পরিকল্পনা) আলী ইকবাল মোঃ নুরুল্লাহ এর নেতৃত্বে। ৪ সদস্যের ওই কমিটি গঠনই করা হয় পরিচালকের (অপারেশন এন্ড মাইন্স) নেতৃত্বে গঠিত কমিটির রিপোর্টের ‍উপর ভিত্তি করে। আলী ইকবাল মোঃ নুরুল্লাহ কমিটি তদন্তে অসংখ্য অনিয়মের পাশাপাশি কেজিডিসিএল’এ একটি সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেয়েছেন। কমিটি তার ৩১ পৃষ্ঠার রিপোর্টে অসংখ্যা দুর্নীতির তথ্য তুলে এনেছেন। কমিটি বলেছে, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে নতুন সংযোগ ও পুনঃসংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এতে একদিকে নিয়মকানুন লঙ্ঘিত হয়েছে, অপরদিকে কোম্পানি তথা রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বোর্ড পেপারে জালিয়াতি, সিন্ডিকেটের বাইরে থাকা কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকানোসহ মহাদুর্নীতির তথ্য প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।

তদন্ত কমিটি সুপারিশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদ, বিপণন উত্তর ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক (চ.দা) প্রকৌশলী সফিউল আজম খান, বিপণন দক্ষিণ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান, জিএম (প্রশাসন) ফিরোজ খানসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে কমিটি।