কয়লার উন্নত প্রযুক্তির বিষয়ে আমরা একটি মতামতে এসেছি। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে সমন্বিত বিদ্যুৎ জ্বালানি মাস্টারপ্ল্যান সংক্রান্ত যৌথসভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। জাইকা আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন কোম্পানির প্রধানরা অংশ নেন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশীয় কয়লার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। মন্ত্রণালয় একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী, তাকে অবহিত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা সব ধরনের বিকল্প নিয়ে ভাবছি, কয়লাকে এখন প্যাসিফিকেশন করেও উত্তোলন করা যায়।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দামের বিষয়টি বার্কের উপর নির্ভর করবে, তারা যদি বিবেচনা করে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই, তাহলে বাড়বে না। আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকের কতটা সহনীয় রাখা যায়, গ্রাহককে কষ্ট দিতে চাইনা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধির প্রভাব সারাবিশ্বে পড়েছে, আমরাও তার বাইরে না। পাইকারি দাম বেড়েছে সেখানেও বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি রয়েছে। আমরা ভর্তুকি থেকে বের হয়ে আসতে চাই। এ জন্য জ্বালানিতে ওপেন মার্কেট পলিসিতে যেতে চাই, বিদ্যুতের সঞ্চালন খাতও উন্মুক্ত করতে চাই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিল্প বিপ্লব হচ্ছে, বিশ্বের অনেক শিল্প সরে বাংলাদেশে আসছে, তাদের দরকার নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস। তাদের কাছে দাম বড় বিষয় না। অন্যদিকে আবাসিকে দাম বড় ইস্যু। আমরা দুটির মধ্যে সমন্বয় রাখার চেষ্টা করছি।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, মিটিগেশন আমাদের দায়িত্বনা, এগুলো উন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য। আমরা কার্বন ইমিশনের জন্য দায়ি না, তাদের তুলনায় অনেক কম কার্বন নিঃসরণ করি। এনার্জি ট্রানজিশনাল শব্দটি আমাদের জন্য যুক্তিসঙ্গত না, এটিও উন্নত দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কয়লা থেকে সরে অন্যদিকে যাচ্ছে সেটাকে ট্রানজিশনাল বলে।
তিনি বলেন, কপ-২৭ এ লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এতে ৫০০ বিলিয়ন ডলার দেবে উন্নতবিশ্ব। এই ফান্ড দিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো কার্বন নিঃসরণ কমাতে কাজ করবে। আমরা ওই ফান্ড থেকে প্রকল্প নিতে পারি। পরমানু বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচিত। পরমানু বিদ্যুতের স্মলমডিউলার প্রযুক্তি আবিস্কার হয়েছে। ছোট ছোট মডিউলার এসেছে, আমরা পরীক্ষামূলক স্মলমডিউলার প্রযুক্তি স্থাপন করতে পারি। আমাদের সামনে হাইড্রোজেন ও কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি রয়েছে।
ফুয়েল মিক্স প্রসঙ্গে বলেন, আমরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রকল্প নিয়ে ফেলেছি। সরগুলোর কাজ চলমান রয়েছে, এরপর ফুয়েল মিক্স নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও দক্ষ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, জাপান-বাংলাদেশ কুটনৈতিক সম্পর্ক ৫০ বর্ষপূতি পালন করেছে চলতি বছর। বাংলাদেশের অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্প যুক্ত রয়েছে জাপান। আমরা জিরো কার্বন নীতিতে বিশ্বাসী। আমি আশাকরি বাংলাদেশ একই পথে এগিয়ে যাবে। জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে রয়েছে, আগামীতেও থাকবে। বাংলাদেশের উন্নয়
জাপানি রাষ্ট্রদূত এ পর্যায়ে বাংলার বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আমি আমার সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে পেরে সৌভাগ্যবান মনে করি। আমি আজ রাতেই জাপান ফিরে যাচ্ছি। জাপানে ফিরে গেলেও হৃদয়ে বাংলাদেশের মানুষ ছুয়ে থাকবে। আমি আন্তরিকভাবে বঙ্গবন্ধুর সোনারবাংলা কামনা করি।
জাইকার উপস্থাপনায় বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয় বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ উন্নতমানের কয়লা মজুদ রয়েছে। মোট মজুদের পরিমাণ রয়েছে ৭.৮ বিলিয়ন টন। যা ২০০টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের সমান। ১০ শতাংশ উত্তোলন করা গেলে ২০ টিসিএফ পাওয়া যাবে। অভ্যন্তরীণ কয়লা বহুমুখী সুবিধা দিতে পারে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।