দুর্ভোগের শিকার গ্রাহকদের কাঁধেই লোডশেডিংয়ের দায় চাপাতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুতের উৎপাদন কম হওয়ায় কমে গেছে সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির আয়, দাম বাড়িয়ে সেই টাকা তুলতে চায়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) দাখিলকৃত আবেদনে এমন যুক্তিই তুলে ধরেছে সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। কোম্পানিটি সঞ্চালন চার্জ ইউনিট প্রতি ২৮ ও ২৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৩ ও ৬৫ পয়সা করার আবেদন করেছে। অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিও ঘুরিয়ে পেচিয়ে সেই কথার প্রতিধ্বনি করেছে বিইআরসিতে দাখিলকৃত বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আবেদনে। বিদ্যুতের কোম্পানিগুলোর এসব আবেদন আমলে নিয়ে গণশুনানি নিতে যাচ্ছে বিইআরসি। যথারীতি রোববার (৮ জানুয়ারি) শুরু হচ্ছে ওই গণশুনানি।
বিদ্যুতের একমাত্র সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবি তার চার্জ বৃদ্ধির আবেদনে উল্লেখ করেছে, যে হারে বিদ্যুতে উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ার কথা, সেই হারে বাড়েনি উৎপাদন। বিতরণ কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী জুলাই-অক্টোবর (২০২২) ৪ মাসে উৎপাদন ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ বৃদ্ধি হওয়ার কথা। প্রকৃত অর্থে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থ বছরে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ৯.০৯ শতাংশ সেখানে হয়েছে ৬.০৬ শতাংশ। শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে চলমান কার্যক্রমের কারণে পর্যায়ক্রমে লোড গ্রোথ কমেছে। এজন্য আগামী বছরগুলোতে ক্রমাগতভাবে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে কোম্পানির খরচের সাথে লোড গ্রোথ সামঞ্জস্যপুর্ণ না হওয়ায় পিজিসিবির সঞ্চালন খরচ বাড়ানো প্রয়োজন।
পিজিসিবি তার আবেদনে লোডশেডিংয়ের কথা সরাসরি না লিখলেও জুলাই-অক্টোবরের চিত্র সামনে এনে দাম বাড়তে চেয়েছে। অর্থাৎ দিনে-রাতে বিরামহীন যে লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগে নাকাল ছিল ভোক্তারা সেই দায় তাদের উপরেই চাপানো হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তার আবেদনে লিখেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পাইকারি মূল্যহার বৃদ্ধি বিক্রয় প্রবৃদ্ধির হার কম ও অফগ্রিডে সোলার থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮৬৯ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে। লোকসান সমন্বয়ের জন্য ২০.২৯ শতাংশ (ইউনিট প্রতি ১.৩৫ টাকা) বাড়ানো প্রয়োজন।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, এনার্জি সেল কমে গেছে এতে রাজস্বে কিছুটা ঘাটতি হতে পারে। তবে পাইকারি দাম না বাড়লে, আমরা দাম বাড়াতে আগ্রহী ছিলাম না। আমরা প্রফিট চাই না, ব্রেক ইভেনে থাকতে চাই। শুধু অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও এনার্জি খরচ তুলতে পারলেই হয়। আমরা চাই সাশ্রয়ী দরে উন্নত সেবা দিতে। সেভাবেই দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৫.১৭ টাকা থেকে ৬.২০ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। বিপিডিবির পাইকারি দাম বৃদ্ধির আবেদনে বলেছিল, চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিদ্যুতে গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও কয়লার মুসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়। পাইকারি দাম না বাড়লে ২০২২ সালে ৩০ হাজার ২৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা লোকসান হবে।
বিপিডিবি ইউনিট প্রতি বর্তমান দর ৫.১৭ টাকা থেকে ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৮ টাকা করার আবেদন করেছিল। সেই প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি নেওয়া হয় গত মে মাসের ১৮ তারিখে। আর ১৩ অক্টোবর বিপিডিবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করে দেন বিইআরসি। রিভিউ আবেদন জমা দিলে দাম বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি।