বিইআরসির (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) আদেশের অপেক্ষায় থাকতে চায় না বিদ্যুৎ বিভাগ। নির্বাহী আদেশে গ্রাহক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর খবর পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫.৭৭ শতাংশ হারে বাড়ানো হয়। দাম বাড়ানো সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশের নতুন গেজেট রাতেই প্রকাশের সম্ভাবনা বেশি বলে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
নির্বাহী আদেশে এভাবে তড়িঘড়ি করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘটনা নজিরবিহীন। বিশেষ করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিবেচনাধীন অবস্থায় থাকা বিদ্যুতের দাম নির্বাহী আদেশে বাড়ানোর খবরে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছে। বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাম বৃদ্ধির আবেদনের উপর ৮ জানুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। আইন অনুযায়ী শুনানি পরবর্তী সম্পূরক প্রস্তাবনা (যদি থাকে) দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় বিইআরসি। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দাম বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্ত্ততি চলছিল। তার আগেই নির্বাহী আদেশে বাড়াতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কয়েক বছর ধরেই বিইআরসি বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের কাজ করে আসছিল। সম্প্রতি বিইআরসি আইনের সংশোধনী এনে বিইআরসির পাশাপাশি নির্বাহী আদেশে দাম বাড়ানোর ধারা যুক্ত করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে দাম বাড়াতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। বিদ্যুৎ বিভাগ বিলিং মাস জানুয়ারি থেকেই নতুন দর কার্যকর করতে চায়। আরইবিসহ কোন কোন সংস্থা ১০ তারিখের মধ্যেই বিল তৈরির কাজ শুরু করে। সে সব গ্রাহকের বিল আদায়ে সমস্যা হতে পারে। ফেব্রুয়ারির বিলের সঙ্গে জানুয়ারির বর্ধিত বিল আদায় করতে গেলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এ কারণে ১৫ জানুয়ারির আগেই আদেশ দিয়ে বিল আদায়ের জটিলতা এড়তে চায় সরকার।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) নিয়ন্ত্রক (অর্থ ও হিসাব) হোসেন পাটোয়ারী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, গ্রাহকের শ্রেণিভেদে বিলিং সময়ে ভিন্নতা রয়েছে। মোট গ্রাহকের ৯১ শতাংশ আবাসিক, বিপুল সংখ্যাক গ্রাহকদের বিলের ব্যবস্থাপনার জন্য মাসের ৬ থেকেই রিডিং গ্রহণ এবং বিল প্রদান শুরু করে ২৪ তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে দাম বাড়লে সমস্যা নেই, পরের মাসে বিলের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এবং অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে গিয়ে আরইবির ব্যয় বেড়ে গেছে। পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগেই ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫২৪ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান হবে ১১২৭ কোটি টাকা। পাইকারি বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিসেম্বর মাস থেকে বাড়তি বিল দিতে হবে। এ খাতে বছরে ৪৭৪০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে যাবে।
বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, তাদের দিক থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার কোনই সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী শুনানির পর সম্পুরক প্রস্তাব (যদি থাকে) দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ওই তারিখের পর ছাড়া সিদ্ধান্ত দিতে চায় না বিইআরসি।
বিইআরসি গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে প্রতি ইউনিট ৫.১৭ টাকা বাড়িয়ে ৬.২০ টাকা নির্ধারণ করেছে। তারপরেই বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন জমা দেয়। শুনানিতে বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি গড় ১৫.৪৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ করে। বেশি ডিপিডিসির ১৬.৭১ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম আরইবির ১৪.৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫.৭৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এবার ১০ থেকে ১৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর জোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।