রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে কোনও অনিয়ম খুঁজে পাননি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তার মতে, এই বাজারের সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যে।
রোববার (১২ মে) আকস্মিকভাবে মহাখালী কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এমন কথাই বলেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। কিন্তু সোমবার (১৩ মে) সরেজমিন গিয়ে এর উল্টো চিত্রই চোখে পড়েছে।
ঠিকই অধিকাংশ দোকানে লোক দেখান নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পণ্য বিক্রি করছেন নিজেদের হাঁকানো দামেই।
অন্যদিকে, বাজার নিয়ে মেয়রকে সন্তুষ্ট দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ক্রেতারা। তারা বলেছেন, মেয়র সন্তুষ্ট হলেও আমরা সন্তুষ্ট না। কেননা, দুই-একটি পণ্য ছাড়া বাজারের প্রায় সব পণ্যই নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী নয়, ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে।
দেখা গেছে, মাংস ও মুদির দোকানে নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সে দামে মাংস বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫২৫ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। ৮০০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না খাসির মাংস, কিন্তু এর নির্ধারিত মূল্য ৭৫০ টাকা। এছাড়া ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ভেড়া ও ছাগীর মাংস। যা বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ৬৫০ টাকায়।
জানা গেছে, এই বাজারে কোনও খাসির মাংস বিক্রি হয় না। রোজা শুরু হওয়ার পর দুই-একটি খাসি জবাই করা হয়েছিল, যার দাম কেজি প্রতি ৮০০ টাকার নিচে নামেনি। আর বাকি ছাগীর মাংসকে খাসির মাংস বলে চালিয়ে দিয়ে কখনও ৭০০ বা ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এছাড়া মুদি দোকানগুলোতে মূল্য তালিকা থাকলেও অধিকাংশ দোকানে তালিকা মেনে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে না। এদিকে, সবজির দোকানগুলোতে কোনো মূল্য তালিকাই নেই।
মহাখালী কাঁচাবাজারে আসা মো. আনিস নামে এক ক্রেতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, মেয়র সাহেব যখন এসেছিলেন, তখন ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আমরা নির্ধারিত দামে মাংস বা অন্য কোনও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই কিনতে পারছি না। তাহলে কীভাবে এই বাজারে অনিয়ম খুঁজে পায়নি সিটি করপোরেশন? একটি দোকানেও কি নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি হচ্ছে? এসব লোক দেখান কথা বললে ব্যবসায়ীরা আরও মাথায় উঠে যাবে।
মো. সিদ্দিকুর রহমান নামে এক ক্রেতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিদিন বাজার মনিটরিং না করে হঠাৎ এসে বলে দিলেই কি হবে যে সব নিয়ন্ত্রণে? আমি তো আজ বাজার করতে এসে মাংস থেকে শুরু করে অধিকাংশ পণ্যই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে কিনেছি। এছাড়া অনেক দোকানি মূল্য তালিকা লুকিয়ে রাখেন। অভিযান হলে তালিকা টানিয়ে দেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ অনুযায়ী এ বাজারের সব থেকে বেশি নিয়ম ভঙ্গ করছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। গরু বলে দিচ্ছেন মহিষ, খাসি বলে দিচ্ছেন ছাগী বা ভেড়ার মাংস। আর দামও রাখছেন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি।
ক্রেতাদের এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বাজারের মনু মাংসের দোকানে গিয়ে। দেখা যায়, ছাগীর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে খাসির মাংস বলে। আর দামও চাওয়া হচ্ছে ৭৫০ টাকা।
এ ব্যাপারে দোকানের মালিক মো. মনুরুদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কোনও বাজারেই খাসির মাংস ৮০০-৮৫০ টাকার নিচে নেই। আর যা ৭০০ টাকা বা ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা ছাগীর মাংস। ৭৫০ টাকায় খাসির মাংস বিক্রি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তালিকায় যাই থাকুক না কেন। আর গরুর মাংস কোথাও ৫২৫ টাকায়, আবার কোথাও ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী পণ্য বিক্রির বিষয়ে কুমিল্লা জেনারেল স্টোরের দোকানি মো. ইসমাইল বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ বাজারের মুদি দোকানগুলোতে তালিকা অনুযায়ীই পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজি ও মাংসের দোকানের ব্যাপারে কিছু অভিযোগ রয়েছে। নিয়মিত মনিটরিং হলে হয়তো তারাও নিয়মের মধ্যেই চলবেন।