কাঁচা মরিচে আগুন, পেঁয়াজে ক্ষুব্ধ ক্রেতা

বাজারদর, অর্থনীতি

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 23:19:24

হঠাৎ করে বেড়ে গেছে কাঁচামরিচের দাম। এক রাতের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৭০টাকা। তাই ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের অল্প করে কেনারও পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্যদিকে, পেঁয়াজের দাম কমার পরিবর্তে উল্টো দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে আরও ৫ টাকা। ফলে কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজ কিনতে এসে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।

বৃহস্পতিবার (২৬সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী এবং সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বুধবারও (২৫ সেপ্টেম্বর) কাঁচামরিচ কেজি প্রতি ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কাঁচাম রিচের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজও কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সেগুন বাগিচায় বাজার করতে আসা কোহিনুর আক্তার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘কাঁচামরিচের দাম আকাশ ছোঁয়া। বুধবার ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মরিচ আজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এটা কল্পনা করা যায়। এটা কোনো কথা হলো।’

 

কাঁচামরিচের দাম লাফিয়ে বাড়ায় কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো.আখতারুজ্জামান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বাজারে কাঁচামরিচের সংকট, তাই দাম বেড়েছে।’

সংকটের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘গত দু’দিন বৃষ্টির কারণে বাজারে আমদানি কম হয়েছে। তাই হঠাৎ করে দাম বেড়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) কিছুটা কম, আগামীকাল (শুক্রবার) আরও বাড়তে পারে।’

এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘আমাদের মরিচ কুষ্টিয়া থেকে আনা হয়। সেখান থেকে এক মণ মরিচ কিনে আনলে, পাতা ও আবর্জনা পরিষ্কারের পরে ৩৪-৩৫ কেজি টিকে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে ফলে মরিচ একদিনের বেশি থাকে না। পচনে ধরলে এক রাতে সব পচে যায়। তাই দাম বাড়ছে।’

মাছের বাজার

 

অন্যদিকে, রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০টাকা কেজি দরে।

কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো আহসানুল্লাহ বলেন, ‘প্রথমে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দেখি নতুন করে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। তাই একই বাজারের পাইকারি আড়ত থেকে ৫ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে এসে দেখি এখানেও দাম বেড়েছে। তবে লক্ষ্য করলাম একই বাজারের মধ্যে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামের ব্যবধান অনেক বেশি। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১৩-১৭ টাকা বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি থেকে খুচরায় বেশি হলে ৫ টাকার ব্যবধান থাক স্বাভাবিক। কিন্তু এক লাফে ১৭ টাকা, যা কখনোই মানা যায় না। বাজার তদারকি সংস্থাগুলো কী এ সব বিষয়ে লক্ষ্য করতে পারে না?’

এদিকে, পেঁয়াজ ও মরিচের দাম বাড়লেও চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুন বাগিচার কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, শসা ৪৫ টাকা, করলা ৬৫ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা, বেগুন ৬৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৬৫ টাকা এবং বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে।

মূল্য তালিকা

 

কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ পাইকারি ৭২-৭৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচও বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ কেজিতে। এছাড়া বরবটি ৬৫ টাকা, করলা ৩০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। অন্যদিকে পটল এক পাল্লা অর্থাৎ ৫ কেজি ১৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১৫০ দরে কেনা-বেচা হচ্ছে।

চায়না আদা-রসুন ১১০-১২০ টাকা, বার্মা আদা ১১০-১৩০ টাকা এবং দেশি রসুন ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে কেনা-বেচা হচ্ছে। মশলার মধ্যে হলুদের গুড়া ১৬০ টাকা, মরিচ ২০০ টাকা এবং আদার গুড়া ৭০টাকা কেজিতে কেনা-বেচা হচ্ছে।

মুরগির ডিম প্রতি হালি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংসের মধ্যে মুরগির মাংস ১৩০-১৫০ টাকা এবং গরু মাংস ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খাসির মাংস ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজার



এদিকে মহাখালী কাঁচাবাজারে শীতের আগাম সবজি শিম কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা দরে। প্রতি পিস ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, একটু বড় সাইজের ফুলকপি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা, ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা পিস, পাকা টমেটো মান ও আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি, গাজর বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা কেজি, করলা বিক্র হয়েছে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে।

এ বাজারে সব ধরনের মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারভেদে এক কেজির প্রতি ইলিশ ৯০০-১২০০ টাকা, ৯০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ ৮৫০-৯০০ টাকা, ৭০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০-৭৫০ টাকা ও ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি তেলাপিয়া ১৪০-১৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৫০-১৬০ টাকা, চাষের রুই ৩৫০-৪০০ টাকা, পাবদা ৬০০-৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, শিং ৪০০-৫৫০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা এবং চিতল মাছ ৫০০-৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর