ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার একদিন পরেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে যেন আগুন লেগেছে। রাতারাতি দাম বেড়ে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায় দুই দিন আগেও বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। তবে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। বাজার ভেদে দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের লাগামহীন দাম জনজীবনে অস্থিরতার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ক্ষুব্ধ ক্রেতাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের বাজারে আগুন। আর বাজারে দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায়ও এখন শীর্ষে রয়েছে পণ্যটি। কোরবানির ঈদের পর পর থেকে কয়েক ধাপে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের চোখে-মুখে ছিল অসন্তুষ্টির ছাপ।
টাউন হল বাজারে বাজার করতে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বেজায় খেপেছেন। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। আমদানি বন্ধের ঘোষণার একদিন পরই কীভাবে দাম বাড়ে? ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আগে থেকেই মজুদ করা আছে। তাহলে একদিন বাদেই পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে নিশ্চয়ই ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। ফলে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের বাজারে এসে পড়তে হয় বিপাকে।'
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কথা হয় আসাদুজ্জামান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'প্রতি মাসে বাজার করার জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। কিন্তু বাজার করতে এসে যখন দেখি, পণ্যের দাম লাগামছাড়া, তখন আমাদের বাজেট ফেল করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো মনিটরিং নেই। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন পেঁয়াজের। এতে ভুক্তভোগী আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা।’
পেঁয়াজের চড়া দামে ক্ষোভ প্রকাশ করে কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা সাইদুর রহমান বলেন, 'গত কয়েক মাস ধরেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বর্তমানে তা লাগামছাড়া। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে কাউকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্যও শুনছি না। যত দুর্ভোগ সব স্বল্প আয়ের মানুষের।’
আরও পড়ুন: লাগামহীন মূল্য, পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করল ভারত
টাউনহল বাজারের এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই। আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ, তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।'
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাজধানীর পাঁচটি স্থানে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করবে। তবে সে সিদ্ধান্ত খুব একটা কাজে আসেনি। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিকটন। দেশেই উৎপাদিত হয় প্রায় ১৭ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ। বাকিটা আসে ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে।
ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার। রোববার এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।