কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে বর্তমান বাজারে আবারও বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে দাম বেড়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। গেল কয়েক মাস ধরে পেঁয়াজের দাম ওঠা নামার ফলে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। চড়া দামের ফলে সবজির বাজারেও ফিরছে না স্বস্তি।
শুক্রবার ১৮ (অক্টোবর) সকালে রাজধানীর টাউনহল বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ক্রেতারা বরাবরের মতো বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অখুশি। আর পণ্যের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা দিচ্ছেন নানান অজুহাত।
টাউন হল বাজারে শীতকালীন আগাম সবজি প্রায় সবই চলে এসেছে। তবে দামও খানিকটা বেশি। প্রতি কেজি নতুন আলু ২৮০ টাকা, পুরাতন আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২৫ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, কচুর মুখি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, কলা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা ও বাঁধাকপি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
টাউনহল বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. রফিক মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় শীতের সবজি সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। দু-একটা সবজি বাদে সব সবজির দাম আগের মতোই আছে। দাম খুব একটা কমেনি। শীতের সবজির বাজার পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।’
বাজার করতে আসা হোসেন আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘কোনো একটা অজুহাত দিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আর কমাতে চায় না। কমলেও তা এক থেকে দুই টাকা কমে। দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম কমানো আর বাড়ানোর ফলে অস্বস্তির মধ্যে পড়েছি আমরা। কর্তৃপক্ষ হাঁকডাক দিয়ে দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে এসে দেখি পেঁয়াজে আবারও সেঞ্চুরি করেছে। আর গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সবজির বাজারে তো আগুন লেগেছে।’
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়- বড় সাইজের রুই মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট সাইজের রুই মাছ ২৫০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ ১৬০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, ছোট মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, পাঙ্গাশ মাছ ১৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ ব্যবসায়ী জহুরুল আমিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘মাছের দাম গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল আছে। ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে অন্যান্য মাছের চাহিদা বেড়েছে। বাজারেও পর্যাপ্ত মাছ আছে।’
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মুরগির। ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ১৩৫ থাকে ১৪০ টাকায়, পাকিস্তানি মুরগি ২৭০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ২১০ টাকায়, দেশি মুরগি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় ও হাঁস ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল রয়েছে গরুর মাংসের দাম। গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৭৫০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা সুমাইয়া শারমিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ ও সবজির বাজার যে পরিমাণ চড়া, তাতে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত আয়ের ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে হু হু করে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। মাংসের বাজারেও স্বস্তি নেই। আজ দেখছি মুরগির দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।’
বাজারের মুদির দোকান ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় চিনির দাম বেড়ে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজিতে। এছাড়া চাল-ডাল তেল-লবণ আটা-ময়দা ও ডিমের দাম স্বাভাবিক রয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জসিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা অভিযোগ করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়া এটা নতুন কিছু নয়। সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের মৌলিক চরিত্র। তবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও শক্ত মনিটরিংয়ের অভাবে বাজারকে অস্থিতিশীল করে রাখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। যথাযথ নজর দিলে এই পরিস্থিতি হতো না।’
টাউন হল বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রহমত শেখ পণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় আমাদের খুচরা পর্যায়েও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। সেজন্যই পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে। আমদানি করা যেসব পেঁয়াজ আসছে, তার বেশিরভাগই পচে যাচ্ছে ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। শীতকালীন সবজি পর্যাপ্ত বাজারে থাকলে দামটা সহনীয় হয়ে আসবে।’