ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কর সংক্রান্ত (ফাঁকি ও পাচার) গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের কনফারেন্স কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এসময় এনবিআরের সদস্য কালিপদ হালদার ও কানন কুমার রায়সহ মেলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু গোপন তথ্য হওয়ায় এগুলো পাবলিকলি প্রকাশ করছি না।
আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় আয়কর মেলা শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার মেলা শেষে আয়কর রিটার্নধারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ লাখে। কর আয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ এ স্লোগানে আগামী ১৪ নভেম্বর শুরু হবে দেশব্যাপী আয়কর মেলা। চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে সাত দিন, জেলা শহরগুলোতে চার দিন, ৪৮ উপজেলায় দুই দিন এবং আট উপজেলায় দিনব্যাপী করমেলা আয়োজন করবে এনবিআর। সব মিলিয়ে এবার দেশের ১২০ স্থানে অনুষ্ঠিত হবে মেলা।
দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে চার কোটি মানুষ সামর্থ্যবান আছে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ সামর্থ্যবানদের মধ্যে আয়কর দেন সব মিলিয়ে এক কোটি লোক। আমরা এটি বাড়াতে চাচ্ছি। আগামীতে আয়কর থেকে রাজস্ব আহরণ ৪০ শতাংশ করতে চাই এ লক্ষ্যেই কাজ করছি।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জর্দা ব্যবসায়ী গাউস মিয়া প্রতিবছর সেরা করদাতা হয়। এটি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। নিয়ম অনুযায়ী কেউ কর দিয়ে সেরা করদাতা হতেই পারে। তবে আগামীতে এইসব বিষয়ে আরও বেশি যাচাই-বাছাই করা হবে বলে তিনি জানান।
আয়কর বিবরণী প্রস্তুতকারী অ্যাকাউন্টিং ফার্মগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আয়কর বিবরণী স্বচ্ছতা বাড়াতে অ্যাকাউন্টিং ফার্মগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। আগামীতে যেসব অ্যাকাউন্ট ফার্ম কোম্পানি রিপোর্টিংয়ে অনিয়ম করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবছরের মতো করদাতাদের জন্য এবারের আয়কর মেলায় কর বিবরণী থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য ব্যাংক ও বুথ থাকবে। একই ছাদের নিচে মিলবে সব সেবা। করদাতাকে শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে। মেলায় নতুন করদাতারা ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নিতে পারবেন। এ ছাড়া ই-পেমেন্টের জন্য পৃথক বুথ থাকবে।
অন্যান্যবারের যেসব সুযোগ সুবিধার ছিল তার পাশাপাশি মেলায় মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের সহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে।
গত বছর আয়কর মেলায় ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬ নাগরিক সেবা নেন। রিটার্ন জমা হয় চার লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৩টি। কর আদায় হয় ২৪৬৮ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৫ টাকা। আর নতুন নিবন্ধন নিয়েছে ৪৫ হাজার ৪৩৭ জন করদাতা।
উল্লেখ্য, কারো আয় বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। নারীর ক্ষেত্রে এই সীমা তিন লাখ। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। এ সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে আছে জরিমানার বিধান।