লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাওয়া পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। দেশি পেঁয়াজ আকার ভেদে রাজধানীর বাজারগুলোতে ২২০ টাকার থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি, ফকিরাপুল কাঁচাবাজার এবং শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি কিন্তু কিছুটা নষ্ট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। ভাল কিন্তু আকারে ছোট সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা দরে। আর ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৪০ টাকা দরে। অথচ একই পেঁয়াজ গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারও বিক্রি হয়েছে ২৬০ টাকা কেজি দরে।
বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩৫ টাকা দরে। পেঁয়াজের দাম কমছে এটা ভালো খবর কিন্তু এখন যে মূল্যে বিক্রি হচ্ছে তাতে নাখোশ ক্রেতারা। তারা বলছেন, দ্রুত যৌক্তিক মূল্যে আসা দরকার।
ফকিরাপুল কাঁচাবাজারে মুদি দোকানদার আতা মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কমছে ভালো খবর কিন্তু আমাদের কি হবে? আমরা তো বেশি দরে কিনেছি। লোকসানের শঙ্কা জানিয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম দ্রুত ২০০ টাকার নিচে চলে আসবে।
মতিঝিল এজিবি কলোনির ব্যবসায়ী এহসানুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, শনিবারের তুলনায় পেঁয়াজের দাম একটু কমেছে। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করছি ২২৫-২৩০ টাকা কেজিতে।
এদিকে গতকাল (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাত্রার প্রাক্কালে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আজ দুপুরে বাসায় সব রান্না পেঁয়াজ ছাড়া হয়েছে।
ওইদিন দুপুরেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পেঁয়াজের সমস্যা মোকাবিলায় সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
তিনি বলেন, এই সমস্যা যাতে না থাকে তাই কার্গো ভাড়া করে আমরা এখন পেঁয়াজ আনা শুরু করেছি। দুই একদিনের মধ্যেই পেঁয়াজ এসে পৌঁছাবে। পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে কাজেই আর চিন্তা নাই।
এর আগে শনিবার (১৬ নভেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে টিসিবি’র মাধ্যমে সরাসরি তুরস্ক থেকে, এস আলম গ্রুপ মিসর থেকে, বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আফগানিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে জরুরি ভিত্তিতে কার্গো উড়োজাহাজ যোগে পেঁয়াজ আমদানি করছে। খুবই কম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে এবং মূল্য স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
মিসর থেকে কার্গো উড়োজাহাজ যোগে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালান ঢাকায় পৌঁছাবে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর)। এস আলম গ্রুপ এই পেঁয়াজ আমদানি করছে, এটি তার প্রথম চালান বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
এদিকে অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা, ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ, আড়তদারদের কারসাজিতে পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে যখন সাধারণ ভোক্তাগণ অতিষ্ঠ ঠিক তখনই ঘটল বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ পচে জাওয়ার ঘটনা। দাম আরও বাড়বে সে আশায় গুদামে মজুদ করে রাখায় পেঁয়াজে পচন ধরেছে। সে পচা পেঁয়াজ এখন আড়ত থেকে বের হচ্ছে প্রতিদিন।
তবে সাধারণ ভোক্তারা মনে করছেন, পেঁয়াজ পচলে ব্যবসায়ীদের কোনো অসুবিধা নেই। কারণ যে পরিমাণ পেঁয়াজ পচবে তার ক্ষতি পোষাতে ভালো পেঁয়াজের দাম বাড়াতে থাকবে ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের উচিত এসব আড়তদারকে খুঁজে বের করা সঠিকভাবে বাজার ব্যবস্থা পরিচালনা করা।