মজুদ থাকার পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। পেঁয়াজের পর চালের দামও বাড়িয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করেছে শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, শুধু এখন নয়, আগামীতেও যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১টায় সরকারের চার মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতাদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এ সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল হালিম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদ, জাতীর রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
সভায় চার মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় যে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পর দিন থেকেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দেন। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এ কথা স্বীকারও করেন। সভায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই খোঁড়া যুক্তি দিয়েছেন। তারা উল্টো পেঁয়াজ, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য আনা-নেওয়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন এবং এজন্য দামা বাড়ানো হয় বলে জানান।
সভায় ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে পেঁয়াজের চাহিদা ও মজুদের কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বছরে ২৪ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ প্রয়োজন। তার মধ্যে আমাদের কাছে ২২-২৩ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ মজুদ ছিল। এক লাখ মেট্রিকটন আমদানির প্রয়োজন, কিন্তু সেটা তো দরকার হবে বছরের শেষ দিকে। এখন তো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ মজুদ আছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয় কমিশনের পক্ষ থেকে।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, পেঁয়াজ কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পেঁয়াজ আমদানির সব তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কারা পেঁয়াজ আমদানি করেছেন, কোথায় বিক্রি করেছেন, এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যারা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত, চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সোজা ম্যাসেজ, কেউ পণ্য মজুদ করে অহেতুক দাম বাড়ালে শাস্তি দেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, তবে নৈতিকতার দিক খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে কোনো জিনিসের ঘাটতি নেই। কিন্তু যারা অনৈতিকভাবে সমস্যা সৃষ্টি করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানি শুল্ক কম জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাজারে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। ভবিষ্যতে এসব পণ্যের দাম বাড়বে না।
এদিকে সভা শেষে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দাম কমার যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। অপর দিকে দেশি নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। ফলে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হবে।
জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে। এ পেঁয়াজ চট্টগ্রাম পর্যন্ত আমদানি করতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে ৩২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এটি সর্বোচ্চ ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হবে। এছাড়া ডিসেম্বরের প্রথমেই বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। সব মিলিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে, আশ্বস্ত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের ২৪ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ লাগে বছরে, এর মধ্যে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। কিন্তু ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় আমাদের দেশের বাজারে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পেঁয়াজের সংকট মোকাবিলায় বড় বড় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। তারা আমাদের কথা মতো মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে এক মাস সময় লাগবে, প্রথম অবস্থায় আমরা তা বুঝতে পারিনি। তাই তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবিলায় উড়োজাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেই। উড়োজাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য অনেক বেশি পড়বে। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে আমরা এ পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি করব।
চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়েনি। কেজিতে দুই-এক টাকা দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে। তবে মোটা চালের নয়, চিকন চালের দাম বেড়েছে। কারণ এখন লোকজন চিকন চাল বেশি খায়। আগামীতে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাৎসরিক চাহিদা, বাংলাদেশে পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুদ ব্যবস্থা, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার বিষয়ে এ সভায় আলোচনা হয়।
তিনি আরো জানান, আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের সংকট সৃষ্টি হলে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তা মোকাবিলা করা হবে বলে এ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।