আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে কাঁচাবাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আদা-রসুন ও পেঁয়াজের দাম। একই সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাল-ডাল-ডিম-মাংসসহ নিত্যপণ্যের বাজারে দ্রব্যমূল্য ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। ক্রেতাদের অভিযোগ করোনা ভাইরাসের জন্য চীন থেকে আদা-রসুন আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে অজুহাতে দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচা এবং শান্তিনগর কাঁচাবাজার গিয়ে দেখা যায়, রসুন পাইকারি প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায় আবার কোথাও বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা কেজিতে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও রসুনের দাম ছিলো ১৩০-১৫০ টাকা কেজি।
একইভাবে আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজিতে। অথচ গত সপ্তাহে আদা বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা কেজিতে। আদা-রসুনের পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ টাকা। গত সপ্তাহে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। আর বৃহস্পতিবার একইবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজিতে। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, পেঁয়াজ-আদা-রসুনের দাম বাড়ছে, আরও বাড়বে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা। আজকে আমি ২০০ টাকা কেজি দরে রসুন বিক্রি করছি। কাল থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হবে। কারণ আজকে রসুন কিনতেই হয়েছে ১৯০ টাকা কেজিতে।
বাজার দুটিতে দেখা গেছে, ভালো মানের মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৩ টাকা। গত সপ্তাহে ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মিনিকেট চাল বিক্রি করছি ৫৫ টাকা কেজিতে। পাশাপাশি পুরাতন ২৮ নম্বর চাল ২ টাকা বেড়েছে। আমরা আজকে বিক্রি করছি ৪২ টাকা কেজিতে।
হঠাৎ বাড়ছে কেন প্রশ্নের জবাবে মদিনা এন্টারপ্রাইজের দোকানদার আইয়ুব মুকিত বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রিও করতে হচ্ছে।
ভালো মানের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫৬ টাকায়। মাঝারি মানের নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে। বাজারে পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকায়। নতুন ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা কেজিতে।
বাজারটিতে চিকন মুসর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। মোট মুসর ডাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজিতে। মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজিতে।
সবজির বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, শীতকালীন ভালোমানের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে, একটু নিন্মমানের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা পিস। বাধাকপিও একই দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ। ৪০ টাকা দামের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা পিস দরে। শীতকালীন অন্যান্য সবজির মধ্যে শিম বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাকা কেজি দরে। মুলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজিতে।
এছাড়াও বাজারগুলোতে করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা, গট কচু ৫০ টাকা দরে। পটল বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, বরবটি ১২০ টাকায়। পাশাপাশি প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া বড় সাইজ ১২০ টাকা, ছোট সাইজ ৪০ টাকা এবং মৌসুমি শাক আঁটি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১৫ টাকা দরে।
সবজির পাশাপাশি বাজারটিতে ডিমের মধ্যে মুরগির ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায় আর হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে। তবে খুচরা মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা হালিতে। হাঁসের ডিম ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। তবে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালিতে।
মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকা কেজিতে। পাকিস্তানি মুরগি প্রতি কেজি ২৪০ টাকায়, দেশি ৪৫০ টাকায়, সাদা কক ২১০ টাকায়, ব্রয়লার ১৩০ টাকায় এবং প্রতি পিস হাস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে আর ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস।
মাছের বাজারে চিংড়ি সাইজ ও জাত ভেদে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি, ইলিশ মাছ সাইজ ভেদে ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা, রূপচাঁদা ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি, দেশি বড় রুই মাছ ১২০০ টাকা কেজি, কাতল মাছ বড় ৯০০ টাকা কেজি, আইড় মাছ ১০০০ টাকা কেজি, বোয়াল মাছ ৮০০ টাকা কেজি, নদীর পাঙাশ মাছ ১০০০ টাকা কেজি। এছাড়া লইট্টা ২০০ টাকা কেজি, পাবদা ৫০০ ও মলা ৪০০ টাকা কেজি, কাচকি ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।