বড়পুকুরিয়ায় কয়লা চুরির ঘটনা পুকুরচুরি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। লুণ্ঠনকারীদের আমরা দায় মুক্তি দিতে পারি না বলে মন্তব্য করেছেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)- এর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অভিযোগ অনুসন্ধান ও গবেষণা কাউন্সিল বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা চুরির অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ আরও বলেন, আমরা কমিটির পক্ষ থেকে ব্যাপক অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছি। সরকারও কমিটি গঠন করেছে। আমরা যাবতীয় সকল পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের বড় উদাহরণ। গোঁজামিল দিয়ে মানুষকে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছে। জাতীয় সম্পদ যারা চুরি করে, যারা বিচার করেন না, সেটাও বড় অন্যায়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা মজুদ রাখার কথা ছিল। কিন্তু মজুদ না রেখে খোলা বাজারে বিক্রি অধিক গুরুত্ব পায়। কয়লা পাচার ও জালিয়াতি হতে পারে জেনেও কখনও মজুদ পরিমাপ করা হয়নি। বরং কয়লা ঘাটতিকে সিস্টেমলস গণ্য করে বিসিএমসিএল, পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ চুরির অভিযোগ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়। সিস্টেমলস ১-৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবটি জ্বালানি বিভাগের বিবেচনাধীন রয়েছে। কমিশন এই উদ্যোগকে অসংগতিপূর্ণ মনে করে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, কেবলমাত্র সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়, পরিচালনা বোর্ড, পেট্রোবাংলা, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ব্যর্থ হয়েছে। দুদকের অভিযোগপত্রে বিসিএমসিএল'র ৭ জন এমডিসহ ২৩ জন অভিযুক্ত। ক্যাবের কমিশন মনে করে ২৩ জনের সঙ্গে পেট্রোবাংলা, জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযোগভুক্ত হবেন। তারা দায় এড়াতে পারেন না।
তিনি বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির মালিকরা নিজের সম্পত্তি যেভাবে সুরক্ষা দেন, কোম্পানির লাভ-ক্ষতি দেখেন। ওইসব সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেভাবে সরক্ষা দেননি। এতে ভোক্তার স্বার্থ বিরোধী (সংবিধানের ৭, ১৩ ও ১৪৩ অনুচ্ছেদ) কাজ করেছেন। জনস্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন সকল কোম্পানির নীতি ও আইনি কাঠামো সংস্কার জরুরি।
শামসুল আলম বলেন, কয়লার গ্রহণযোগ্য ময়েশ্চার নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লা ময়েশ্চার পরিমাপ ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করতে হবে। অনলাইন মনিটরিং ব্যবস্থা থাকতে হবে, এতে ভোক্তাদের একসেস থাকতে হবে। বিসিএমসিএল চীনা কোম্পানির কাছ থেকে খনি বুঝে না নেওয়া পর্যন্ত খনি ভাতা, ভূ-গর্ভস্থ ভাতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিভাতা বন্ধ রাখতে হবে। তারা এখন শুধু বিপননের কাজ করছে। বিসিএমসিএল’র লোকজন এসব ভাতা পাওয়ার ন্যায্য অধিকারী নন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, পেট্রোবাংলার প্রস্তাব মতে কয়লা সরবরাহের সিস্টেমলস ১.৫ শতাংশ ধরে নিলেও আত্মসাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টন। বিসিএমসিএল চুক্তিতে কয়লায় ৫.১ শতাংশ ময়েশ্চার ধরে ১০১ লাখ ৬৬ হাজার টন কয়লার বিল পরিশোধ করে। কিন্তু বাস্তবে কয়লায় ১০.৫ শতাংশ ময়েশ্চার ছিল। প্রকৃতপক্ষে কয়লার ময়েশ্চারের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হচ্ছে ২.৩ শতাংশ। ফলে অগ্রহণযোগ্য মাত্রায় ময়েশ্চারসহ কয়লা কিনেছে চীনা কোম্পানির কাছ থেকে। হিসেব করে দেখা গেছে চীনা কনসোটিয়ামকে ২ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার বিল বেশি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এটা বলা যায় পানি নিয়ে কয়লার দাম পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে কয়লায় ১৫ শতাংশ হারে ময়েশ্চার দিয়ে ভোক্তাদের প্রতারিত করার তথ্য পাওয়া গেছে।
কয়লার ক্রয় বিক্রয় হার যৌক্তিক নয় উল্লেখ করে বদরুল ইমাম বলেন, কয়লার সরবরাহ ব্যয় যৌক্তিক করা হলে মূল্যহার হ্রাস পাবে। এতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ কম পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এমএম আকাশ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও প্রফেসর সুশান্ত কুমার দাশ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, ক্যাব স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত রিপোর্ট সুপারিশসহ জ্বালানি বিভাগে জমা দেওয়া হবে বলে ক্যাব জানিয়েছে। ওই ঘটনায় দুদক এবং জ্বালানি বিভাগ পৃথক কমিটি গঠন করে। দুদকের রিপোর্টের ভিত্তিতে ২৩ জনের নামে মামলা বিচারাধীন রয়েছে।