জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চলতি অর্থবছর সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভার নেতৃত্ব দেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
বৈঠকে সংশোধিত আরএডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এ অর্থবছর মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। সেখান থেকে বৈদেশিক সহায়তা অংশের বাদ গেছে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অভিজ্ঞতার আলোকে সংশোধিত এডিপি তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো মন্ত্রণালয় টাকা নিয়েছে আবার কোনো মন্ত্রণালয় ফেরত দিয়েছে। এটি স্বাভাবিক বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। কিন্তু করোনার কারণে কিছু প্রভাব তো পড়বেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণের টাকা ব্যয় করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এর কারণ হচ্ছে আমাদের এক নিয়ম এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আরেক নিয়ম। আমাদের নিয়ম সুন্দরভাবে শেষ করতে পারলেও অন্যদেরটা বুঝতে বা নিয়ম মানতে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে বৈদেশিক ঋণের অর্থ ব্যয় করতে দেরি হয়। তবে আখেরে তাদেরও অ্যাকাউন্ট খালি হয়। আমাদের অ্যাকাউন্টে টাকা থাকে না।’
সম্মেলনে জানানো হয়, মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৪৭৫টি (স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বাদে)। সেখান থেকে ২৬৯টি বেড়ে আরএডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৪৪টিতে। তবে এরমধ্যে নতুনভাবে অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ২৪৬টি এবং মূল এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই এমন ২৩টি প্রকল্প রয়েছে। বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে যুক্ত করা হয়েছে ১৯০টি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা। যা মূল এডিপিতে ছিল ২৪২টি।
এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের লিংক প্রকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে ২২টি উন্নয়ন প্রকল্প। যা মূল এডিপিতে ছিল ৬২টি। বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের সংখ্যা রয়েছে ৭৭১টি। মূল এডিপিতে এই তালিকায় ছিল ১ হাজার ৪৫টি। একই সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প রাখা হয়েছে ১০৩টি। যা মূল এডিপিতে ছিল ৮৯টি প্রকল্প।
অন্যদিকে, সংশোধিত এডিপিতে কমেছে প্রকল্প সমাপ্তের লক্ষ্যমাত্রা। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই ৩৫৫টি প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ছিল ৩৪১টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪টি। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ৩১৪টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩১২টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প রয়েছে একটি। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছর ৪১টি প্রকল্প সমাপ্ত হচ্ছে না।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ: আরএডিপিতে খাত ভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৫৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যা মোট সংশোধিত এডিপির ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে। এ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৫১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ২৩ হাজার ৭৬৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যা মোট আরএডিপির ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যান্য খাতে প্রাথমিক বরাদ্দ হচ্ছে-কৃষি খাতে ছয় হাজার ৭১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ৭৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। পানি সম্পদ খাতে ছয় হাজার ৩৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। শিল্প খাতে তিন হাজার ৫৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তৈল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে দুই হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। যোগাযোগে দুই হাজার ২২৮ কোটি টাকা। শিক্ষা ও ধর্মে ২০ হাজার ৪৩২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে ৬১০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণে ১০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। গণসংযোগে ১৯৮ কোটি টাকা। সমাজ কল্যাণ-মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়নে ৭৯৮ কোটি টাকা। জনপ্রশাসনে পাঁচ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বিজ্ঞান-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৫৪৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এই ১৭টি খাতে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯২০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর উন্নয়ন সহায়তা খাতে (ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থার জন্য) বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তিন হাজার কোটি টাকা।