বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বাজারে। দাম বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের। করোনা সংকটের কারণে ক্রেতারা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য কিনছেন। ফলে গত দুই-তিন দিনের তুলনায় চাল, পেঁয়াজ, সবজিসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) কেজি প্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। শুক্রবার (২০ মার্চ) বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। দাম বেড়ে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর টাউন হল বাজার ঘুরে বাজারের এমন চিত্রই দেখা যায়।
এদিকে চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের চালে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা করে বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৬ টাকায়। মাঝারি মানের বিআর-২৮ চাল ৪৩ টাকা, স্বর্ণা ৩৬ টাকা, পাইজম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়। সুগন্ধি চাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে চাল ব্যবসায়ী মো. মাসুম বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতারা চাল বেশি কিনছেন। যার যে পরিমাণ প্রয়োজন, তার থেকে বেশি কিনছেন। আর আমরা ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়েও আড়ত থেকে চাল পাচ্ছি না। বর্তমানে চালের চাহিদা বাড়ায় আমরা পাইকাররাও চাল কিনতে পারছি না। আড়তদাররা আমাদের কাছে চালের দাম বেশি রাখছেন, আমরাও বেশি দামে বিক্রি করছি।
টাউন হলের সবজির বাজারও চড়া। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করোলা ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, সজনে ডাঁটা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে প্রতি পিস বড় সাইজের ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সজিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত তিন দিনের তুলনায় আজ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এর জন্য দায়ী অনেক ক্রেতা। করোনা আতঙ্কে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক জিনিসপত্র কেনার ফলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন ভুক্তভোগী আমরা সাধারণ ক্রেতারা। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন নিম্নআয়ের মানুষেরা।
এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে সব ধরনের মাংসের। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৮০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা এবং বকরির মাংস ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তাছাড়া, ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি ১২৫-১৩০ টাকা, কক মুরগি ১৮০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা ও হাঁস ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টাউন হলের আরেক ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। দু’দিন ধরে বাজারে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা বেশি। মাল কিনছি বেশি দামে, ক্রেতাদের কাছে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। বর্তমানে বাজারে কিছু পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় অর্ডার দিয়েও কিনতে পারছি না।
এদিকে, মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বড় সাইজের রুই মাছ ৩৫০ টাকা, ছোট সাইজের রুই মাছ ২৫০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, সরপুঁটি ২০০ টাকা, ছোট মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম বেড়ে ৩৫ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে, সয়াবিন তেল ও চিনির দাম আগের মতোই রয়েছে। ডালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে কিছু কিছু পণ্য এরই মধ্যে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
বাজারের এমন পরিস্থিতির সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, করোনা আতঙ্কে আতঙ্কিত না হয়ে ভোক্তাদের স্বাভাবিক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। একই সঙ্গে প্যানিক সৃষ্টি করে বেশি করে পণ্য কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। যাতে করে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিতে না পারেন। ক্রেতা/ভোক্তাদের পাশাপাশি বাজার সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।