দেশের নামকরা শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘মিরসরাই ইকোনমিক জোন পুরোপুরি চালু হলে আগামী ১০ বছর পরে দেশে বাসায় কাজ করার মতো কাজের লোক পাওয়া যাবে না।
উন্নত দেশের মতো নিজেদের গৃহস্থালীর কাজ নিজেদেরই করতে হবে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছাড়া অন্যদের কাজের লোক রাখার মতো সামর্থ্য থাকবে না-এতটাই ডিমান্ডেবল হয়ে যাবে বাংলাদেশের মানবসম্পদ। এখন যেসব শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যাচ্ছে তারাও দেশে ফিরে আসতে শুরু করবে তখন।’
বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে তরুণ এই শিল্পোদ্যোক্তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির আগাম চিত্র এভাবেই তুলে ধরেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষানগর হিসেবে পরিচিত বোস্টন রাজ্যের নর্থ ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তিনি দেশে ফিরেন ২১ বছর আগে। ঢেউটিনের ভারি শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সময় উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত করতে গিয়ে দেশের ৬৪টি জেলা চষে বেড়ান তখন। এখন তিনি আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার অনারারি কনসাল।
১৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে এখন ফেনীতে গড়ে তুলছেন লোহার ভারি শিল্পকারখানা। এতে তৈরি হবে লৌহজাত বিভিন্ন সামগ্রী-যা এতদিন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এবারে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ৫০০ একর জায়গা নিচ্ছেন। আজ সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (বেপজা) সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে পিএইচপি ফ্যামিলির।
ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ফেনীতে ১৫শ কোটি টাকার প্রকল্পটি চালু হবে আগামী বছরের শেষে। এতে কর্মসংস্থান হবে তিন হাজার বেকারের।’
মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হেলিকপ্টারে চড়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখেছি। সেখানে দ্রুতগতিতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ও বেপজা খুবই ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। আবাদি ও চাষের জমি বাদ দিয়ে পতিত জমিতে এভাবে অর্থনৈতিক শিল্পজোন গড়ে তোলা সত্যিই একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কর্মসংস্থান হলে রাস্তাঘাটে অকারণে মারামারি থাকবে না। অপরাধ প্রবণতাও কমে যাবে।’
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে গিয়ে ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিস্থিতি হবে ঈর্ষণীয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন রপ্তানিতে আমরা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশে পরিণত হবো। এখন যেমন পণ্যের সঙ্গে মানবসম্পদও রপ্তানি হচ্ছে আগামীতে হবে মানবসম্পদ আমদানি। অর্থাৎ বিদেশে কর্মরতরা ভালো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হবে, সেদিক থেকে এটা অনেকটা মানবসম্পদ আমদানির মতোই। তখন উন্নয়ন পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যাবে। বিদেশ থেকে ফিরে আসা শ্রমিকরা তখন দেশেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’
মিরসরাইয়ে ৫০০ একর জমিতে কি ধরনের শিল্পকারখানা স্থাপন করা হবে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা, দেশের চাহিদা ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য যেকোনো প্রকল্পই করতে পারি আমরা এ জোনে।’
দেশের অন্যতম শিল্পপতি ও সুফিসাধক মিজানুর রহমানের সাত ছেলের মধ্যে ইকবাল হলেন দ্বিতীয়। বছরে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ঢেউটিন, বিটুমিন, রড, শিপইয়ার্ড, ফিশারিজ, কোল্ড স্টোরেজ, কাঁচ, প্রপার্টিজ, অ্যালুমিনিয়াম সেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় বার্ষিক লেনদেন বর্তমানে ৫ হাজার কোটি টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১০ হাজার। আগামী বছরের শেষ নাগাদ ফেনী প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কর্মচারীর সংখ্যা ১৩ হাজার আর বার্ষিক লেনদেন উন্নীত হবে ১০ হাজার কোটি টাকায়।