ঢাকা: দেশের মৃৎ শিল্পের ইতিহাস আজকের নয়, শত বছরের পুরানো। এক সময়কার রাজা-বাদশাদের মধ্যে মাটির তৈরি কারুকাজমণ্ডিত জিনিসপত্র ব্যবহারের প্রচলন ছিল। বিশেষ করে মাটির তৈজসপত্র, ফুলদানি বা ঘর সাজানোর নানা অনুষঙ্গ। তাদের ব্যবহার করা মাটির জিনিসপত্র দেখলেই নজরে আসবে কত নিপুণ হাতে সেগুলোর ওপর ফুটিয়ে তোলা হতো বিভিন্ন চিত্র। পরবর্তীতে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর কমতে থাকে।
সেই স্থান দখল করে নেয় কাঠ, লোহা ও স্টিল বা সিরামিকসের পণ্য। এখন দেশে আর রাজা-বাদশারা নেই, তাই মাটির জিনিসপত্র কেনার চাহিদাও কমে গিয়েছিল। তবে সম্প্রতি বাঙালিয়ানা বজায় রাখতে সৌখিন মানুষের মাঝে মৃৎ পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এখন বিক্রি হচ্ছে কারুকাজমণ্ডিত মৃৎ পণ্য, যেগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্য।
জানা গেছে, এখন অনেকে ঘরে ষোলোআনা বাঙালিয়ানার ছাপ রাখতে ব্যবহার করছেন মাটির জিনিসপত্র। বসার ঘর থেকে রান্নাঘর সবজায়গায় আধুনিকতার ছাপ থাকলেও নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখতে এসব মৃৎ পণ্য ব্যবহার করছেন তারা।
মাটির তৈরি হাজার হাজার পণ্যের দেখা মিলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন দোয়েল চত্বরে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এই মৃৎ পণ্যের সমারোহ দেখা যায়। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোয়েল চত্বর থেকে সচিবালয়মুখী রাস্তার দু’ধারে নানা রঙেরকারুকাজমণ্ডিত মৃৎপণ্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে রয়েছে বাহারি রং ও ডিজাইনের ফুলদানি থেকে শুরু করে মেয়েদের গহনাও। দামও সবার সাধ্যের মধ্যে।
ডিজাইন, আকার, রং ও কারুকাজের ওপর ভিত্তি করে ফুলদানির দাম পড়বে ১০০-১০০০ টাকা। এসব ফুলদানির নকশা ফুটিয়ে তুলতে কোনোটাতে কাঁচ আবার কোনোটাতে জরি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই কাঁচ বা জরির চমকে অতি সহজেই সাজানো যায় বসার ঘর থেকে থেকে ডাইনিং রুম।
দোয়েল চত্বরের মৃৎ পণ্য বিক্রেতা চুন্নু মিয়া বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ঘর সাজাতে এখন মাটির পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে মাটির তৈরি মগ, চায়ের কাপ, ফুলদানির চাহিদা বেশি। তবে ইদানিং পাট ও কাঠের তৈরি আয়না ও অন্যান্য পণ্যের কদরও বাড়ছে সমানভাবে।’
কেউ চাইলেই স্বল্প খরচে ডাইনিং রুমের সবকিছুই সাজাতে পারেন মাটির পণ্য দিয়ে। খাবার প্লেট থেকে চায়ের কাপ বা কোরমাদানি থেকে থেকে ভাতের হাড়িও পাওয়া যায় দোয়েল চত্বরে। প্রতিটি খাবার প্লেটের দাম পড়বে ১০০-২০০ টাকা, চায়ের কাপ ৫০-১০০ টাকা এবং দেয়াল সাজাতে ১০০-৩০০ টাকার মধ্যে মিলবে মাটির তৈরি নানা শোপিস।
একদিকে নিজের সংস্কৃতি ও অন্যদিকে দাম অন্যান্য পণ্যের তুলনায় কিছুটা কম হওয়ায়ই মাটি ও বাঁশ-বেঁতের পণ্য সামগ্রীর দিকে ঝুঁকছেন সৌখিন মানুষরা বলে জানা নাজনীন ইসলাম। দোয়েল চত্ত্বর থেকে বসার ঘরের জন্য ল্যাম্প শেড কিনেছেন তিনি।খাবার প্লেটও কিনেছেন ছয়টি।
নাজনীন বলেন, মাটির এসব প্লেট গ্লাস খাবার টেবিলের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে তুলে কয়েকগুন। আর বাশ-বেঁতের ল্যাম্প শ্যাডগুলো দেখতে যেমন সুন্দর দামও অনেক কম। তাই যে কেউ একটু আভিজাত্য ও দামের সাশ্রয়ীর কথা চিন্তা করলে মাটি ও বাঁশ-বেঁতের ঘড় সাজানোর জিনিষ পত্রের কোনো বিকল্প নেই।
এছাড়া নানা ডিজাইনের মেয়েদের গহনার মধ্যে- মাটির চুরি, গলার মালা, কানের দুল পাওয়া যায়। তবে কেউ ঘর সাজাতে দোয়েল চত্বর থেকে মাটির পণ্যের পাশাপাশি পাট ও বাঁশের তৈরি পণ্যও কিনতে পারেন। বিশেষ করে পাটের ফ্লোরম্যাট, পর্দা, টেবিলম্যাটের চাহিদা বাড়ছে সৌখিন ক্রেতাদের মাঝে। মান ভেদে পাট পণ্যের দাম পড়বে ৫০-১০০০ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে বাঁশের তৈরি ল্যাম্প শেডের চাহিদাও বাড়তি। বসার ঘর থেকে শোয়ার ঘরে নানা রঙের ল্যাম্প শেডের আলোর খেলা পছন্দ করেনসৌখিন মানুষরা। এসব ল্যাম্প শেডের দাম পড়বে ৭০০-১৫০০ টাকার মধ্যে।