ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের পরই চামড়া শিল্পের অবস্থান। তবে গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য নিয়ে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এর প্রধান কারণ ট্যানারি মালিকরা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের কমপ্লায়েন্স সনদ পান নি। মূলত সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারে (সিইটিপি) সলিড বর্জ্য প্রক্রিয়া এখনো শুরু হওয়ায় মালিকরা ওই সনদ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ট্যানারি শিল্পের জন্য এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিইটিপি।
জানা গেছে, সাভারের ট্যানারি পল্লীতে সিইটিপি যথার্থভাবে কাজ করে না। ফলে কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেটের জন্য লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানাতে পারছেন না বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।
ট্যানারি মালিকদের অভিযোগ, সম্প্রতি সাভারের চামড়া নগরীতে দায়সাড়াভাবে সিইটিপি’র নির্মাণ কাজ শেষ করেছে চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিয়াংসু লিংজাই এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন কোম্পানি। মূলত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) পক্ষ থেকে চীনা কোম্পানিকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চিঠি দেওয়া হয়। না হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এজন্য দায়সাড়াভাবে কাজ শেষ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সিটি ট্যানারির কর্মকর্তারা জানান, তারা ব্যাংক থেকে কোটি টাকা লোন নিয়ে ট্যানারি কারখানায় বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু সিইটিপি চালু না হওয়ায় তাদের বিনিয়োগ বৃথা যাচ্ছে। ইউরোপীয় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে চাচ্ছেন না। কারণ এখনও লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ তাদের কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট দেয়নি। ট্যানারি মালিকরা বিটিএ’র সাথে যোগযোগ করলেও তাদের জানানো হয়েছে, সিইটিপি যথাযথভাবে চালু না হলে এই আন্তর্জাতিক সংগঠনকে আমান্ত্রণ জানানো যাবে না।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিটিএ’র সভাপতি শাহীন আহমেদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘অধিকাংশ ট্যানারি মালিক ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে কাজ শুরু করতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা সিইটিপি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়া। ফলে সলিড বর্জ্য কিভাবে পরিশোধন করা হবে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিইটিপি চালু না হওয়ায় এখন ট্যানারির সলিড বর্জ্য খোলা জায়গায় রাখতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে সিইটিপি বেশিক্ষণ চালু রাখা সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে ট্যানারির অন্য বর্জ্যও নদীতে ফেলতে হচ্ছে। ফলে আগে মতো পরিবেশও দূষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমাদেরই বিপাকে পড়তে হবে। কারণ সিইটিপির এমন নাজেহাল অবস্থা দেখলে ইউরোপীয় ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। তারা একবার ফিরে গেলে ফেরানো কঠিন হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে বিসিকের পরিচালক (প্রকল্প) মো. আব্দুল মান্নানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে বর্তমানে ১১২টি ট্যানারি কারখানায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন।