কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোর আবেদন করেছে। তবে আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিইআরসির আইনে বলা হয়েছে শুধ লাইসেন্সির (বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান) আবেদন বিবেচনায় নেওয়া যাবে। এর বাইরে অন্যকোনো আবেদন গ্রহণ করার কোনো অপশন আইনে রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা লিখিত আবেদন করেছি। তাদের কিছু করার না থাকলে সেটিও নিশ্চয়ই লিখিত জানাতে হবে। আমরা জবাব পেলে যেখানে যাওয়ার সেখানে যাব। তারা ৪৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে না হলে কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে ফেরত পাঠাতে বাধ্য। তারা যখন পারছে না যেখানে গেলে প্রতিকার পাওয়া যাবে সেখানেই যাব।
প্রতিকারের জন্য কোর্টে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন অধ্যাপক সামছুল আলম।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানোর বিষয়ে ৯ জুন বিইআরসিতে আবেদন করে ক্যাব। আবেদনে লিখেছে, সারাদেশ এখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মহামারি কবলিত। দেশবাসী গৃহবন্দী। ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ বন্ধ। অর্থনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড স্তব্ধ। বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ। জনবল ছাঁটাই চলছে। টাকা ছাপিয়ে কেবলমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দেয়া কোন সমাধান নয়। চলতি অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত রাজস্ব আহরণ অসম্ভব।
ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত করোনা মহামারিতে চলতি বছরে যে রাজস্ব ঘাটতির শিকার হবে, তার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার কম হবে না। অনুরূপ ক্ষয়-ক্ষতি গ্যাস খাতেও হবে। উভয় ঘাটতি বিদ্যমান অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস ও ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হলে বিদ্যমান ও করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতি একদিকে যেমন মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে উভয়খাতে তেমন ভর্তুকির পরিমাণও কমবে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের কারণে তরল জ্বালানির আমদানি ব্যয় ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে সে দরপতন সমন্বয় করে তরল জ্বালানির মূল্যহার যেমন কমানো যায়, তেমন জ্বালানি খাতে করোনাজনিত রাজস্ব ঘাটতিও সমন্বয় করা সম্ভব।
এই প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে অযৌক্তিক ব্যয় হ্রাস এবং ব্যয়বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা ও তরল জ্বালানির দাম কমানো এখন জরুরি বলে আবেদনে উল্লেখ করেছে ক্যাব।
আবেদনে আরও বলা হয়, বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মূল্যহার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু করোনাজনিত কারণে রাজস্ব আহরণ বিঘ্নিত হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়া ভর্তুকি বৃদ্ধি পাবে। এ যাবত গ্যাসে কোন রাজস্ব ঘাটতি ছিল না। এ খাতে মজুদ অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এলএনজি গ্রিডে যোগ হওয়ায় চলতি অর্থবছরে সরকারকে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি ভর্তুকি দিতে হবে। করোনাজনিত কারণে গ্যাস খাতে রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়বে। ফলে ভর্তুকিও বাড়বে।
আরও বলা হয়, জ্বালানি তেল বরাবরই লোকসানে ছিল। বিগত বছরগুলিতে দরপতনের কারণে জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় বিপুল পরিমাণে হ্রাস পায়। কিন্তু তা মূল্যহারে যৌক্তিক সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র বিপুল পরিমাণে লাভ হয়। করোনাজনিত কারণে আমদানি বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। মূল্যহারে তা সমন্বয় না হওয়ায় বিপিসি’র লাভের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে-লাভে করোনা জনিত রাজস্ব ঘাটতি সমন্বয় হবে এবং তেলের মূল্যহারও কমানো যাবে।