ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শহিদ উল্লাহ দেশেই রয়েছেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে ডিএসইর কাছে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা ও তিন মাস সময় চেয়েছেন।
এবিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এমডি বলেন, একটি ইমেলে আমার কাছে আর্থিক সহায়তা ও সময় চেয়েছেন ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের এমডি। আমি বিষয়টি কমিশন এবং ডিএসইর পর্ষদকে জানিয়েছি।আমরা দ্রুত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
গত ২৩ জুন থেকে ডিএসই সদস্য প্রতিষ্ঠান ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের কার্যালয়ে আকস্মিক তালা ঝুলিয়ে সম্প্রতি আত্মগোপনে চলে যান এর মালিক শহিদ উল্লাহ। তাকে খুঁজে না পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই হাউজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা। যা পুরো পুঁজিবাজারে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
এ ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তড়িৎ গতিতে পদক্ষেপ নেয়। তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) দুই প্রতিনিধিসহ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। যে কমিটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাটের পরিমাণসহ বিস্তারিত তুলে ধরবে।
একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করলেও তারা কেন ফোনে মেসেজ পায়নি, এ জন্য সিডিবিএলের কোনো ঘাটতি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করবে।
এ পরিস্থিতিতে রোববার হঠাৎ শহিদ উল্লাহ ডিএসইর এমডিকে ফোন দেন বলে জানা গেছে।
ফোনে শহিদ উল্লাহ ডিএসইর এমডিকে জানান, তিনি কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানি থেকে টাকা নিয়েছেন। যা ফেরত দিতে না পারায় তার জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। এ কারণে তিনি আত্মগোপন করেছেন।
এ সময় তিনি ডিএসইর এমডিকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের টাকা তিনি ফিরে দেবেন। এর জন্য তার তিন মাস সময় প্রয়োজন। উত্তরে ডিএসইর এমডি তাকে দ্রুত আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন।
এদিকে তোলপাড় সৃষ্টি করা এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রোববার জরুরি পরিচালনা পর্ষদ সভা করেছে ডিএসই। ওই সভায় দ্রুত বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরতের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে কাজ করা ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠানটির তিনটি শাখা আছে। সবকটি শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
বন্ধ করার আগে ওই হাউজটি থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। তবে এর বিনিময়ে ডিএসইকে দেয়া চেক বাউন্স করে। ফলে হাউজটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডিএসই। তাদের কাউকে না পেয়ে কেনা শেয়ারগুলো সাময়িকভাবে ফ্রিজ করে রাখে।
হাউজটি বন্ধ নিয়ে গত ২৩ জুন থেকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এর আলোকে ঐক্য পরিষদের বিনিয়োগকারীরা ২৪ জুন সরেজমিনে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের প্রধান কার্যালয় গিয়ে তালা ঝুলছে দেখতে পায়। ওই সময় বহু বিনিয়োগকারী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে।
কিছু কিছু বিনিয়োগকারীকে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ থেকে দেয়া চেকও বাউন্স করেছে। হাউজ থেকে তাদের চেক দেয়া হয়েছে টাকা তোলার জন্য। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে তারা দেখে অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই।
এদিকে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদ উল্লাহসহ তিন পরিচালক এবং ব্রোকারেজ হাউজটির নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৭ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে ডিএসই।
এসব অ্যাকাউন্ট অবিলম্বে ফ্রিজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি পাঠিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ। যদিও ডিএসইর কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এসব অ্যাকাউন্টে কোনো অর্থ নাও থাকতে পারে। এর বাইরে শহিদ উল্লাহসহ তিন মালিক যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পল্টন থানাকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগকারীদের টাকা নিয়ে লাপাত্তা ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের মালিক