ঢাকা: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা ‘গায়েবের’ ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেও তা প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা তদন্তের দুটি রিপোর্ট পেয়ে গেছি ইতিমধ্যে। কারা কারা জড়িত এবং কীভাবে হয়েছে বা কীভাবে করতে যাচ্ছে সেটা রিপোর্ট জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আমরা আগেই বলেছি কোনো রকম দুর্নীতিকে আমরা প্রশ্রয় দেব না।’
রোববার (২৬ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত জুলাইয়ের শেষ দিকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির বিপুলসংখ্যক কয়লার হদিস না পাওয়ার কথা জানা যায়। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত খনি থেকে উত্তোলিত দেড় কোটি টন কয়লার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টনের মতো কয়লার হিসাব পাওয়া যায়নি।
এই ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কয়লা খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তারা নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদনও জমা দেয়।
দুটি তদন্ত রিপোর্টে কতজনকে দোষী পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মামলা করেছি, মামলার তদন্তের ওপর এখন নির্ভর করছে। এই তদন্তগুলো হয়ত সাপোর্টিভ হবে মামলার জন্য। আর দুদকও যেহেতু মামলা করছে, আর আমি প্রকাশ্যে এগুলো বলতে চাই না। কারণ, এগুলো মামলাকে আরও বেশি অন্যদিকে নিয়ে যাবে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘যেহেতু দুদক করছে, মামলার তদন্ত পুলিশ করবে, আমাদের ইনিশিয়াল একটা তদন্ত আছে মন্ত্রণালয়ের। এই বিষয়গুলো ওই অবস্থায় থাকলে আরও বেটার হবে তারা যদি আরও ডিটেইলে যায়।’
‘এটা তো মন্ত্রণালয়ের বিষয় না, মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে কোম্পানি থাকে পেট্রোবাংলা-এটা তাদের বিষয়। সেখানে আমরা কোনোভাবে দুর্নীতির ছিঁটেফোটা হলেও তা প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সে অনুপাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কয়লাখনিতে দুর্নীতি অনেক আগে থেকে সে দিকে ইঙ্গিত করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো আজকে এক দিনের ব্যাপার না। কারণ, এক লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা যদি সরাতে হয় তাহলে ৩০ হাজার ট্রাক লাগবে। এটা তো আর একদিনে হয়নি, এটা ২০০৫ সাল থেকে স্টকে বিল্ডআপ করে করে দেখিয়েছে।’
‘একটা দিক অন্তত ভালো হয়েছে যে, শেখ হাসিনা সরকারের সময় এই দুর্নীতিটা ধরা পড়েছে। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকুক আর শেষ হয়ে যাক, যেটাই হোক না কেন, ধরা তো পড়েছে আমাদের হাতে। আমরা বিদ্যুৎ বিভাগকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম তদন্ত করার জন্য। তারা সেখানে গিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্ট দেয়াতে তো ধরা পড়েছে, আর যদি ধরা না পড়ত, তাহলে তো আপনারা জানতে পারতেন না।’
বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ না হলে কেউ জানতে পারত না- তেল-গ্যাস কমিটির এই মন্তব্যের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যদি ওটা বন্ধ না হতো, তাহলে আমরা জানতে পারতাম না, এটা সত্য কথা, এটা সবাই জানে। এটা ওনাদের আলাদা করে বলতে হবে না, এখানে আমরাই কথাটা বলেছি।’
ঈদে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে ভালো ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি যে, গতবারের চেয়ে এবারের অবস্থা অনেক ভালো ছিল, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ডাউনের ক্ষেত্রে। কিছু গ্রাম পর্যায়ে একদম ইনটেরিওরে অনেক সময় বিদ্যুতের বিভ্রাট হয়েছে, এটা লোকালি হয়েছে। কোনো এলাকায় হয়ত টান্সফরমার পুড়ে গেছে, সেখানে হয়ত বিদ্যুতের কিছু ঘাটতি ছিল। তবে ওভারঅল বিদ্যুৎ নেয়ার ব্যাপারে, সঞ্চালন এবং জেনারেশনের ব্যাপারে কিন্তু কোনো ঘাটতি ছিল না।’
‘একমাত্র আমাদের ঘাটতি হয়েছে রংপুরে। যেহেতু ওখানে বিদ্যুতের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বন্ধ হয়েছিল। আমরা একটা ছোট একটা প্ল্যান্ট চালু রেখেছিলাম যাতে আমাদের ভোল্টেজটা ঠিক থাকে। এছাড়া আর বড় বিষয় ছিল না। তবে আশা করছি আগামী মাসে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। কারণ জেনারেশন আমাদের হাতে যথেষ্ট আছে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বর নাগাদ আমরা অল্প পরিসরে চালু করতে পারব যেভাবে কয়লা উঠছে। আমরা কিছু কয়লা দিয়ে কিন্তু চালু করেছিলাম একটা প্ল্যান্ট। গত পাঁচ দিন যাবত ওখানে কিন্তু একটা প্ল্যান্ট চালু ছিল। আমরা ইতিমধ্যে সেটাকে কাভারআপ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটা স্টক বিল্ডআপ করার জন্য। বাকিটা ওখানকার কয়লা দিয়ে হবে। পরবর্তী সময়ে খনির এরিয়া বাড়াতে হবে আরও বেশি। নিজস্ব কয়লার পরিমাণও বাড়াতে হবে। সেটার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে দেখা যাক।’
কয়লা আমদানি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কয়লার খনিতে সাধারণত অনেক সময় ওয়াটার বিল্ডআপ করে যায়, খনি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন কী করবেন? আবার অনেক দেশে অনেক সময় ধস নামতে পারে, অনেক মানুষ মারা গেছে। খনিতে এই ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। সেগুলোর সময় কী করবেন। সেই ইমার্জেন্সি সময়ের জন্য আমরা একটা স্টক বিল্ডআপ করা দরকার বলে আমরা কিছু ইমপোর্ট করতে যাচ্ছি।’
কী পরিমাণ ইমপোর্ট করা হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লাখখানেক টনের মতো হবে। এই ইমপোর্ট করার জন্য সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্যারিং করা, চিটাগাং পোর্ট থেকে বা মোংলা পোর্ট থেকে বড় পুকুরিয়াতে নিয়ে আসাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
কোন দেশ থেকে আনা হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা এখনও ঠিক হয়নি। টেন্ডার দেয়া হয়েছে।