ঢাকা: সরকারি কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণের কার্যক্রম আগামী ১ অক্টোবর শুরু হবে। অর্থাৎ আগামী অক্টোবর মাস থেকে সরকারি কর্মচারীরা ব্যাংক থেকে গৃহ ঋণ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গৃহ নির্মাণ ঋণের ওয়ার্কিং কমিটি মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই পাঁচটি সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি করে মেমোরেন্ডাম অব অান্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) স্বাক্ষর করবে ।
সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রুপালী এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন। এ ঋণে সরল সুদহার হবে ১০ শতাংশ। ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ দেবে সরকার, বাকি ৫ শতাংশ বহন করবে ঋণগ্রহীতা। এজন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ঋণ নেওয়ার জন্য অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে ।
মিটিং এ আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, একটা অভিন্ন আবেদন পত্র তৈরি করার ব্যাপারে। আবেদনকারী কর্মচারীরা জাতীয় পরিচয়পত্র , চাকরির স্থায়ীকরণপত্র, বেতনের রশিদ, সম্ভাব্য পেনশন থেকে আয়, ব্যাংকের হিসাব বিবরণ ও অন্য ব্যাংকে যদি কোনো ঋণ নেওয়া থাকে- এ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেল এ বিষয়টি মনিটর করবে। সরকারি কর্মচারীরা অনলাইনের মাধ্যমে মনিটরিং সেলে এই আবেদন করবে।
এদিকে ২০ গ্রেড থেকে ১০ গ্রেডের কর্মচারীরা এ ঋণ নিতে পারবে না। কারণ মাসের বেতনের ৮০ শতাংশ অনেক ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশের ওপর ঋণের কিস্তি জন্যে দিয়ে দিতে হবে।
কর্মচারীরা (যাদের ১০ থেকে ২০ গ্রেড) বলছেন, মাসিক বেতন থেকে ঋণের কিস্তি দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর কিস্তি প্রদান করলে সারা মাসজুড়ে না খেয়ে থাকতে হবে। মোট ২৩ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ কর্মচারী ।
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কিং কমিটির এক নির্ভরযোগ্য সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, গৃহ ঋণের নীতিমালা তো আর বাইবেল না যে পরিবর্তন করা যাবে না। অবশ্যই একটা সময়ে কর্মচারীদের ঋণ নেওয়ার জন্য অনিহা আছে তা অবশ্যই দূর করতে হবে ।
তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে পেনশনের টাকা এখানে কাজে লাগানো যেতে পারে। অন্যদিকে কর্মকতাদের এ ঋণ নিতে কোনো সমস্যা হবার কথা নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরো জানায়, বিনা সুদে এ ঋণ দিলে কর্মকতা ও কর্মচারীরা সবাই ঋণ নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। যার একটা ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কেনার জন্য এ ঋণ নিবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাদের মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই; তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন গত জুলাই জারিও হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঋণের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এ ঋণ এখনই পাওয়া যাচ্ছে না ।
সরকারি চাকরিজীবীরা মাত্র ৫ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা হবে না) সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন। ৩০ জুলাই ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’-এর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহ নির্মাণ ঋণ নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৬ বছর করা হয়েছে। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
নীতিমালায় সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৭৫ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ঋণ ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ঋণের সুদ গড়ে ১০ শতাংশ ধরে বলা হচ্ছে, সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হবে ৫ শতাংশ। বাকি অংশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে। ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর সুদ, অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ নেওয়া হবে না। এ ছাড়া কোনো ‘প্রসেসিং ফি’ বা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো ‘অতিরিক্ত ফি’ দিতে হবে না। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২০ বছর।