কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় ৩৫ জন বিশেষ শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ‘এনডিডি প্রটেকশন অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’ স্কুলটি গত বছর প্রতিষ্ঠিত হয়।শিশু কেন্দ্রিক পরিকল্পনা অনুসারে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে এখানে।শিক্ষকদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে এই বিশেষ শিশুরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষকদের পরিশ্রম আর ভালোবাসায় আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি গাওয়া, ছবি আঁকা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে শিশুরা।
এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইফ আল আজাদ বলেন,“এখানে ভর্তির ৩৫ জনের মধ্যেই ৩৫ রকম সমস্যা।একেকজনের বুদ্ধির লেভেল একেক রকম হওয়ায় সে অনুযায়ী আমরা তাদের শেখানোর চেষ্টা করে থাকি। এজন্য আমরা ৬ মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিভাবে এই অটিস্টিক শিশুদের পাঠদান করাবো। তাদের সাথে কিভাবে আচরণ করবো। কিভাবে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আফসানা বেগম জানান, নিজের ছেলের অটিজম চিহ্নিত হওয়ার পর তাকে স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে পড়েছিলেন নানা ঝামেলায়। সেখান থেকে নিজেই তার সমাধানের জন্য এই মহৎ উদ্যোগ নেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “নানা কারণে বাংলাদেশে বাড়ছে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা। সে তুলনায় স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। এই সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছি আমরা। “এই স্কুলের প্রধান উদ্দেশ্য বিশেষ শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া।
অধ্যক্ষ আরও বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে শহরের বিভিন্ন এলাকার ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়াও মোট ১০ জন শিক্ষক কর্মচারী আছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুর বিভিন্ন থেরাপির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের এ প্রতিষ্ঠানে সেরকম থেরাপীর ব্যবস্থা নেই। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আরও বেশী পরিমাণের থেরাপীসহ তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য আরও কিছু আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা করতে।
কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মোঃ গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা কত অসহায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই শিশুটির জন্য তাঁদের হাত-পা বাঁধা। এই শিশুদের কাছে পৌঁছাতে হবে। তবে তা বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সঠিক পরিকল্পনা ও সঠিক দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে এই শিশুদের জন্য কাজ করতে হবে।আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের কাছে আমরা, অর্থাৎ বিশেষ সন্তানের বাবা-মা'রা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা বা অটিজমের বিষয়টি সায়মা ওয়াজেদের কারণেই আজ প্রচার পেয়েছে।
তিনি বলেন, “শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। অটিজম শিশুদের মধ্যে আনন্দ পৌঁছে দিতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।তাদের শিক্ষাদান এবং মেধা বিকাশে কাজ করছি। তিনি মনে করেন, সমাজের সবাই এগিয়ে এলে এসব শিশুরাও সাধারণ শিশুদের মতো জীবনযাপন করতে পারবে। আমাদের সবারই উচিত এসব শিশুদের বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থাকা তাদের মানসিক ও শারীরিক সাপোর্ট দেওয়া”।