কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দু নেফরা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ফি নিয়েও ফরম পূরণ না করার অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত তারিখ পার হলেও ফরম পূরণ না করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা নিয়ে চিন্তিত সেই বিদ্যালয়ের ২৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার(২৭ এপ্রিল) ৭জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পত্র জমা দেওয়া হয় উলিপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে যথা সময়ে ফরম পূরণের এর টাকা জমা দিলেও তিনি সঠিক সময়ে ফরম পূরণ করেননি। শিক্ষা বাের্ড কর্তৃক ফরম ফিলাপ এর নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলে শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রধান শিক্ষকের নিকট এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি শিক্ষার্থীদের জানান, তিনি কিভাবে ফরম ফিলাপ করবেন এটি তার বিষয়। এছাড়াও গত ২০০০ সালে উক্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রধান শিক্ষকের এরকম অবহেলার কারণে সেই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগ পত্রে। এজন্য ২০০০ইং সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকেরা। এ বিষয়টি তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের একজন দয়িতা রানি জানান, ফরম পূরণের সময় চলমান থাকা অবস্থায় আমি ও আমার বান্ধবীরা প্রধান শিক্ষকের নিকট জনপ্রতি ২১০০ টাকা টাকা করে জমা দেই। কিন্তু গত পরশুদিন(২৫ এপ্রিল) আমরা জানতে পারি ফরম পূরণ হয়নি। প্রধান শিক্ষককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি টালবাহানা করছেন। এখন আমরা পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে চিন্তিত।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত। ঘটনার বিস্তারিত জানতে ইতোমধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলার পর জানান, তিনি (প্রধান শিক্ষক) ইচ্ছাকৃত ভাবে টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলেন। তিনি (প্রধান শিক্ষক) আমাকে জানালেন যে আগামী সপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়ার সুযোগ আছে। তবে বোর্ড এটা গ্রহণ করবে কিনা আমি নিশ্চিত নই। আমি মনে করি তিনি বড় ধরনের অপরাধ করে ফেলেছেন।
এ ব্যাপারে নন্দু নেফরা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বিষয়টিকে অনিয়ম আখ্যা দিয়ে বলেন, আমি বিষয়টি গত পরশুদিন(২৫ এপ্রিল) শুনেছি। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষকের দেখা না পাওয়ায় কারণ জানতে পারিনি। এ ব্যাপারে তিনি কোন আলোচনা করেননি আমার সাথে।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ওই বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ফিরোজ শাহ আলমের নিকট এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি পত্রিকায় ফরম পূরণের স্থগিতাদেশ সম্বলিত একটি নির্দেশনা দেখেছিলাম। এজন্য আমি ফরম পূরণের টাকা জমা দেইনি। নির্দেশনাটি অফিসিয়াল নোটিশ আকারে ছিলো কিনা এবং কোন পত্রিকায় ও কবে নির্দেশনা দেখেছেন এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণের কার্যক্রম শুরু করা হয়। যা চলে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। ১ থেকে ৭ তারিখের মধ্য কেউ ফরম পুরণ না করতে পারলে তাঁরা ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিলম্ব ফি সহ ফরম পূরণ করার সুযোগ ছিলো শিক্ষার্থীদের এবং ১০০ টাকা বিলম্ব ফি জমা দিয়ে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফরম পূরণ করার নির্দেশনা দিয়েছিলো শিক্ষা বোর্ড।