অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের জারি করা আর্থিক ক্ষমতা অর্পন সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী বাজেটে অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক একজন কর্মচারীকে বছরে একবার সর্ব্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী প্রদান করতে পারবে।
১০ হাজার টাকার বেশি বা একই অর্থ বছরে একবারের বেশি সম্মানী দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতি বা অনুমোদন নিতে হবে। রুটিন কাজের জন্য সম্মানী দেয়া যাবে না।
কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা এ নিয়ম না মেনেই বছরে বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে আট থেকে দশটি অতিরিক্ত বেসিক সমপরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেন। আর এ অনিয়মের মূল কারিগর অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিন।
বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরেও বিতর্কিত শিক্ষককে ফের অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক পদে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য তোড়জোড় করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষকই তাকে পুনরায় নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধির বিপক্ষে রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আয় করের জন্য বেতন বিবরণী , ভর্তি পরীক্ষার কাজ, বিদ্যালয়ের সেমিষ্টার পরীক্ষার পারিতোষিক কাজ, বাজেটের প্রস্তাব পাঠানোর কাজ দেখিয়ে অর্থ ও হিসাব দফতরের কর্মকর্তারা পৃথক পৃথক বেসিক পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেন।
কাজী নাসির উদ্দিন ২০১৯ সালের ২৪ জুন অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক হিসাবে যোগ দেন। তিনি জুন মাসে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেটের কাজের জন্য ছয় দিনের বিপরীতে এক মাসের সমপরিমাণ (৫২ হাজার) টাকা নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সান্ধ্যকালীন কোর্সের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি বিভাগ কোর্সের ৩৩ ভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা হয়। কিন্তু এই ৩৩ ভাগ অর্থের ব্যয়ের ব্যাপারে কোন স্পষ্ট নীতিমালা নেই। এই অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যে যার মত করে ব্যয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের কাজ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ৭৮ হাজার টাকা, অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিন ৫৪ হাজার টাকার আরেকটি বেসিক সমপরিমাণ অর্থ নেন।
এ বিষয়ে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান গণমাধ্যমকে অর্থ লোপাটের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, "আমাদের অডিট টিমেরই আপত্তি ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের হিসাব পর্যালোচনা করার সময়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে শিগগিরই ইউজিসি তদন্তে যাবে বলে ইউজিসি সচিব জানান।"
লাইফ অ্যান্ড আর্থ সাইন্সের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, "সাবেক উপাচার্যের মেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে কয়েকজন ব্যক্তিকেই ঘুরে ফিরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে বারবার প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ দেয়ায় অনিয়মের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যের প্রতি আমাদের দাবি রয়েছে প্রশাসনিক পদগুলোতে যেন একই শিক্ষকদের বারবার নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হয়।"
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসাবে একজন গবেষক ও ক্লিন ইমেজধারী অভিভাবককে পেয়েছি। এতে আমরা সবাই আনন্দিত। কিন্তু বিতর্কিত ব্যক্তিকে যদি পুনরায় নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় তবে উপাচার্যকেও এসব অনিয়মে জড়িয়ে ফেলার আশংকা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ দিবেন। প্রশাসনিক পদগুলোতে পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্বের অনিয়মগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। "
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, "কাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এখন পর্যন্ত কোন ফাইল আসেনি। অফিসিয়ালি ফাইল আসলে বলতে পারব কাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।"