যেভাবে হবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা

, শিক্ষা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 08:09:32

করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সীমিত পরিসরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শুধুমাত্র নৈর্বাচনিক বিষয়ে গ্রুপ ভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে আবশ্যিক বিষয় যেমন বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি, ধর্ম বা অন্যান্য বিষয়ে পরীক্ষা হবে না। সে সকল বিষয়ে গত বছরের মতো সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

কিভাবে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে যথাক্রমে ৬০ দিন এবং ৮৪ দিনের শ্রেণি কার্যক্রম শেষে পরীক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। বর্তমান অতিমারি কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বা ইলেকট্রিক বিষয়ের ওপর অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিখন ফল অর্জনের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

কারা কতদিনের অ্যাসাইনমেন্ট দেবে:

এসএসসি বা সমমান পর্যায়ের অ্যাসাইনমেন্ট ১৮ জুলাই থেকে দেয়া শুরু হবে এবং তাদের ১২ সপ্তাহে মোট ২৪ টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ৩ টি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর প্রতি সপ্তাহে ২টি করে মোট ২৪ টি অ্যাসাইনমেন্ট করবেন। অর্থাৎ প্রত্যেকটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ওপর তারা ৮ টি করে অ্যাসাইনমেন্ট করবেন এবং এই ৮টি অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে তাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস কাভার হবে।

এইচএসসি এবং সম্মান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট ২৬ জুলাই থেকে দেয়া শুরু হবে। তাদের ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০ টি অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হবে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয় এবং এইচএসসিতে যেহেতু প্রতিটি নৈর্বাচনিক বিষয় দুটি করে পত্র আছে, অতএব মোট ৬টি পত্রে ৩০ টি অ্যাসাইনমেন্ট করবেন। অর্থাৎ প্রতিটি পত্রে পাঁচটি করে অ্যাসাইনমেন্ট করবেন। এইচএসসি সমমান পরীক্ষার্থীরা প্রত্যেকে সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট করবেন। অ্যাসাইনমেন্ট এর মাধ্যমে তাদেরও যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আমরা দিয়েছি সেটি কাবার করব।

শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, যেগুলো আবশ্যিক বিষয় যেমন- বাংলা, ইংরেজি, এসএসসির ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, গণিত,আইসিটি ধর্ম, কিংবা চতুর্থ বিষয় সেই বিষয়গুলোর কোন অ্যাসাইনমেন্ট আমরা দেবো না। এসএসসি বা এইচএসসি সম্মান পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাদের জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় আবশ্যিক বিষয়গুলো যেমন বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি, ধর্ম এই বিষয়গুলো তারা পড়ে এসেছে এবং এই বিষয়গুলো তাদের পূর্ববর্তী পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয়েছে। এসএসসি এবং সম্মান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নৈর্ব্যক্তিক বিষয়সমূহ ইতোমধ্যে বোর্ডগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করেনি। সে কারণে এই বিষয়গুলোর মূল্যায়ন আবশ্যক। তাছাড়া আবশ্যিক বিষয় সমূহের নম্বর জেএসসি-জেডিসি বা সমমান পরীক্ষায় সাবজেক্ট ম্যাপিং এর মাধ্যমে এসএসসি বা এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ে নম্বর প্রদান করা সম্ভব। বাংলা ইংরেজি গণিত ধর্ম আইসিটি এগুলো অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে কিংবা যারা এইচএসসি দেবেন তাদের এসএসসি পর্যন্ত এগুলোর মূল্যায়ন হয়ে গেছে। কাজেই এ বিষয়গুলো এবার আমরা মুল্যায়ন করবো না। আমরা শুধুমাত্র ইলেকটিভ বিষয় বা নৈর্বাচনিক বিষয়গুলো যেগুলোর মূল্যায়ন আগে হয়নি সেই বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করব।

তিনি বলেন, পূর্ববর্তী জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে তাদের সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এবং আমরা যে অ্যাসাইনমেন্ট দিচ্ছি সেই অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে অথবা শুধুমাত্র সাবজেক্ট ম্যাপিং এর মাধ্যমে এসএসসি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। অ্যাসাইনমেন্টগুলোর মূল্যায়ন কতটা সঠিক হচ্ছে, সেটিরও মূল্যায়ন করবার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সারাদেশে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যায়নসহ অ্যাসাইনমেন্ট এর কপি নিয়ে এসে সেগুলা কতটা ভালো আছে উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো দেখব। যদি দেখি অ্যাসাইনমেন্ট গুলোর মূল্যায়ন যথেষ্ট ভালো হচ্ছে তাহলে সেই অ্যাসাইনমেন্ট থেকে এই পরীক্ষার ফলাফল কিছুটা যাবে, আর যদি মনে করি এটা গ্রহণ করার দরকার নেই তাহলে শুধুই সাবজেক্ট ম্যাপিং দিয়ে করব। অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করবেন স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।

এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ:

ঈদুল আযহার পর এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ শুরু হবে। এবার সম্পূর্ণ অনলাইনে ফরম পূরণ হবে। কোন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে হবে না। যেহেতু কম সংখ্যক পরীক্ষা নেয়া হবে, শুধুমাত্র যে কয়টি সাবজেক্ট ওপর পরীক্ষা নেয়া হবে, সেই অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের সময় নির্ধারণ করে দেয়া হবে এবং বিষয়গুলো নিয়ে বোর্ড থেকে খুব শিগগিরই নির্দেশনা জারি করা হবে। কবে থেকে কবে ফরমপূরণ কার্যক্রম চলবে বিস্তারিত নির্দেশনা বোর্ড থেকে দেওয়া হবে। যেহেতু সমস্ত টাকা লেনদেন অনলাইনে হবে তাই ফি কমবেশি নেবার কোন সুযোগ থাকবে না। কারিগরি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নবম শ্রেণি এবং একাদশ শ্রেণিতে যে পরীক্ষাগুলো হয় কারিগরি এসএসসি এবং এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার পাশাপাশি নবম এবং একাদশ শ্রেণি তাদের পাবলিক পরীক্ষা গুলো এখানে সম্পন্ন হবে।

অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের যেভাবে মূল্যায়ন হবে:

অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সকল বিষয়ে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীরা নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মতোই অংশগ্রহণ করবেন। এক বা দুই বিষয়ে যারা অকৃতকার্য অনিয়মিত পরীক্ষার্থী যদি আবশ্যিক বিষয়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বার পরীক্ষা দেবার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে তাদের ফলাফল সাবজেক্ট ম্যাপিং মাধ্যমে দেয়া হবে। অন্যদের যেমন দেওয়া হবে। আর যদি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ক্ষেত্রে যেগুলো পরীক্ষা নেয়া হবে সেই বিষয়ের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য হয় তাহলে তারাও অন্যান্য পরীক্ষার্থীর মতোই এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীগণ তারাও আবশ্যিক বিষয় ছাড়া নির্বাচনের বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা দেবে।

তিনি বলেন, যদি নভেম্বর-ডিসেম্বরে মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে নিতে পারি তাহলে তো পরীক্ষা নম্বরের ভিত্তিতেই হবে। নৈর্বাচনিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে পরীক্ষার ভিত্তিতে আর আবশ্যিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে সাবজেক্ট ম্যাপিং এর মাধ্যমে। অ্যাসাইনমেন্ট করার প্রয়োজন হবে পরীক্ষার সার্বিক প্রস্তুতির জন্য। যদি কোন কারণে সেই সময়ে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে দুটি অপশন হতে পারে- একটি হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট থেকে প্রাপ্ত ফল কিছুটা অংশ যাবে, বাকিটা সাবজেক্ট ম্যাপিং থেকে অথবা শুধুই সাবজেক্ট ম্যাপিং থেকে পরীক্ষার ফলাফল হতে পারে। সেই অপশনটি যদি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয় তখন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। যদি পরীক্ষা না নেয়া যায় পরিস্থিতির কারণে সেক্ষেত্রে তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব এই মূল্যায়ন যতটা পারছি সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা কি অ্যাসাইনমেন্ট থেকে কিছুটা অংশ নেবো? নাকি বাকিটা সাবজেক্ট ম্যাপিং দিয়ে করবো, নাকি শুধুই সাবজেক্ট ম্যাপিং বা কিভাবে করব, যদি মনে হয় মূল্যায়নের স্বচ্ছতা যথেষ্ট রক্ষা করতে পারিনি তাহলে সেক্ষেত্রে হয়তো শুধুই সাবজেক্ট নিয়ে যাব।

আব্যশিক বিষয়ে পরীক্ষা কেন হচ্ছে না:

ইংরেজি আর বাংলা যদি পরীক্ষা নিতে চাই সে ক্ষেত্রে আমাদের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা একদিনে ব্যাপক সংখ্যক। এসএসসিতে প্রায় ২১ লাখ পরীক্ষার্থী হতে পারে। আর এইচএসসির ক্ষেত্রে প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী এবং এরা সকলেই বাংলা ইংরেজির বিষয়গুলো প্রত্যেকেই পরীক্ষা দিবে। এত ব্যাপক সংখ্যক পরীক্ষার্থী একদিনে পরীক্ষা নেওয়া সেটি আমরা চাইছি না। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ থাকছে না। তাই শুধু যেগুলো আগে মূল্যায়ন হয়নি সেই বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেব। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক থেকেই এ পর্যন্ত বাংলা ইংরেজি পড়ে এসেছে। শিক্ষার্থীদের এই ভাষার ওপর দক্ষতা হয়ে গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর