করোনার হিংস্র থাবায় দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা দেশের সকল প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে তা পাঠদানের উপযোগী করার জন্যও দিয়েছেন কিছু নির্দেশনা।
সরকারের সকল নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসনসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। যাতে সঠিক সময়েই সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন তারা।
রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলাতে মোট ৪১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৫০টি মাধ্যমিক, ৭০টি মাদ্রাসা ও ১০টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেলাতে মোট ৬৫২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় রয়েছে। ৬৫২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬২২টি বিদ্যালয়ই সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বাকি ৩০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান চলা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চিয়তা। এই ৩০টির মধ্যে ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দী রয়েছে ও ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে।
সরেজমিনে বালিয়াকান্দি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পাঠদানের উপযোগী শ্রেণি কক্ষ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে শেষ প্রস্তুতি চালাচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য স্কুলে নতুন করে হাত ধোঁয়ার বেসিন, প্রতিদিন তাপমাত্রা মাপার জন্য ডিজিটাল জ্বর মাপার যন্ত্র, পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্কুল মাঠ ও চারপাশে যে ময়লা-আবর্জনা তৈরি হয়েছিল তা পরিষ্কার করা হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাঠদানের উপযোগী করে শ্রেণিকক্ষ সাজিয়ে রেখেছে শিক্ষকেরা। রঙ তুলি দিয়ে শ্রেণিকক্ষের চারপাশই সাজিয়েছেন অপরুপ রূপে। স্মার্ট ক্লাস রুমগুলোও তারা পরীক্ষামূলকভাবে চালু রেখেছেন। শিশুদের খেলাধূলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও খেলার সামগ্রীগুলো ব্যবহারের উপযোগী করছে। খেলার মাঠগুলোতেও চলছে পরিচর্যা। মাঠের ঘাসগুলো নিধন করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কীটনাশক।
শিক্ষার্থী অনিন্দ্য, কাজী জীম, ফারজানা ইতি তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘদিন পর আমাদের স্কুল খোলার নির্দেশনায় আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। বন্ধ থাকাকালীন আমরা অনলাইনে ক্লাস করলেও শ্রেণিকক্ষে এসে ক্লাস করার মজাটাই আলাদা। সরকারের স্কুল খোলার সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। স্কুলে এসে আমরা অনেক আনন্দ করতে পারবো।
বালিয়াকান্দি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চাঁদ সুলতানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয় খুলছে। সরকার নির্দেশিত সকল নির্দেশনা মেনে আমরা পাঠদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যালয় প্রস্তুত করে রেখেছি। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) আমার বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিমী মহোদয়।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বিদ্যালয়গুলোকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পরিপূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। ৯ সেপ্টেম্বরের পর বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হবে। এরমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি নজরদারিতে রাখছেন। আশা করছি সময় মতো আমরা বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করতে পারবো।