করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে সাভারের শিক্ষাখাতে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপট দেখে গেছে। একদিকে যেমন চলমান নির্দেশনা মেনে সরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তেমনি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চালাচ্ছেন শিক্ষা কার্যক্রম। যার ফলে শিক্ষা থেকে অনেকটা দূরে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে করে মফস্বলে বেড়েছে শিক্ষার বৈষম্যতা।
মফস্বলের বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলো তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শুধু অনলাইনে ক্লাস করেনি, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোচিং বা এসাইনমেন্টের কথা বলে নিয়মিত ক্লাস চালিয়ে গেছেন। এছাড়ও দূর্বল ছাত্রদের জন্য বিশেষ পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এতে চলমান নির্দেশনা মেনে সরকারি স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ থাকলেও বেসরকারিতে অধ্যায়নরতা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার যে ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল তা অনেকাংশেই পুষিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী অর্থ অভাবে তা হয়ে উঠছে না।
এ অবস্থায় সরকারিতে অধ্যায়নরতা শিক্ষার্থীদের সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাস ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।
সরকারি স্কুলে অধ্যায়নরত দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. নাঈম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ রাখার চলমান সরকারি নির্দেশনা মেনে আমাদের স্কুল বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় প্রাইভেট পড়ে কোনো মত কিছুটা কাভার করছি। কিন্তু আমাদের অন্য বন্ধুরা যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ে তাদের স্কুল গুলো বে-আইনী ভাবে চলছে। ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা যারা গরিব বা মধ্যবিত্তরা আছি তারা সবাই সরকারি স্কুলে, তাই তাদের পড়া-লেখা স্কুল অফ হওয়ার কারণে অফ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যারা মধ্যবিত্ত বা বড় লোক আছে তারা কিন্তু ঠিকই প্রাইভেট স্কুলের মাধ্যমে পড়ালেখা চালায় যেতে পাড়ছে। যার ফলে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের মাঝে একটা বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে।’
নাঈম আরও বলেন, ‘আমরা যদি ঠিক মত ক্লাস করতে না পারি তাহলে দেখা যাবে যে রেজাল্টের ক্ষেত্রে অনেক বৈষম্য হবে। তাই স্বাস্থ্যবিধির আর কড়াকড়ি করে হলেও আমাদের স্কুল খুলে দেওয়া হোক।
অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের স্কুলে অনলাইন ক্লাস চলছে কিন্তু অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠছে না। তাই অনলাইন ক্লাসেও এ সমস্যা সমাধান হবে না।
ফেডারেশন অফ কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশন সাভার উপজেলার সভাপতি এস এম নাসির উদ্দিন বার্তা২৪.কমকে বলেন, অনেকেই তাদের প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে, দেখছিনা তা নয়। তবে এটা তদারকি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে বিষয়টা হচ্ছে অনেক স্কুলে পরীক্ষার্থী আছে, তারা একঘন্টা বা দুই ঘন্টার করে কোচিং করাচ্ছেন। অনেকে আবার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কৌশল করে সচল থাকতে বা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে একঘন্টা বা দুই ঘন্টার করে ক্লাস করাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনু মোহাম্মদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, বৈষম্যের চেয়ে বড় কথা হচ্ছে সকলকেই সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। কারণে যে সকল প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে সেখানে কিন্তু শিক্ষার্থীদের করোনার ঝুঁকি রয়েই গেছে। তাই সরকারি নির্দেশনা মেনে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাই ভালো।
এ ব্যাপারে কথা বলতে সাভার উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাবশিরা ইসলাম লিজা সহ একাধিক শিক্ষা অফিসারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তারা ফোনটি রিসিভ করেননি।