আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশি শক্তির নানা চাপের মাঝে বাংলাদেশ ভারসাম্য রক্ষার যে কুটনীতি মেনে চলছে তা অব্যাহত রাখারও তাগিদ দিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেছেন, রাজনীতিবিদদের আত্মসম্মান বিকিয়ে পরদেশ মুখাপেক্ষী না হয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নেই বেশি মনযোগী হওয়া বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।
বার্তা২৪.কম: সাম্প্রদিক দশকে উন্নয়নের নানাসূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে। এরই মাঝে একটি পুরনো সংঘাতময় সংস্কৃতিতে ফিরেছে দেশ। উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষের আগ্রহ, দেশে আসলে কি হতে যাচ্ছে, আমরা আসলে কোন দিকে যাচ্ছি..
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমার মনে হয় নির্বাচনের দিকেই আমাদের গন্তব্য। নির্বাচন সঠিক সময়ে তফশিল অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি মনে করি। তফশিল ঘোষণার পরে সকল রাজনৈতিক দলই নির্বাচনমূখি হবে, এটা আমার প্রত্যাশা। কারণ একটি রাজনৈতিক দলের প্রত্যাাশা নির্ভর করে জনগণের জনসমর্থনের ওপর। বাংলাদেশের জনগণ সব সময়ই গণতন্ত্রমনা। তারা নির্বাচনে ভোট দিতে চান, তারা দেশ গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হোক সেটা চান এবং সেটার জন্য আমি দেখেছি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সময় সাধারণ মানুষ জীবন দিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য। নূর হোসেন-ডা. মিলনরা জীবন দিয়ে গেছেন। জনগণ জানেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে তাদের ভাগ্যের যে খুব পরিবর্তন হবে তা নয়, কিন্তু স্বৈরশাসক একটা দেশে থাকলে দেশ সভ্য সমাজের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে না। আমরা দেখব, একজন গাড়িচালক নূর হোসেন যখন জীবন দেন তিনি একজন সাধারণ মানুষ, আবার একজন ডা. মিলন যখন জীবন দেন তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসক-এতে বোঝা যায় সমাজের প্রত্যেকেই গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন। সেই জায়গায় গণতন্ত্রের বিরোধী কোন কার্যকলাপে কোন রাজনৈতিক দল যুক্ত থাকলে তাদের অস্তিত্ব বেশিদিন ধরে রাখা যায় না। আমার মনে হয়, এটি সকল রাজনৈতিক দলই অনুভব করে এবং তফশিল ঘোষণার পরে নির্বাচনের চিত্র হয়তো অনেকটাই পাল্টে যাবে আমার বিশ্বাস।
বার্তা২৪.কম: বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না এবং এর কারণ হিসেবে তারা বিগত কিছু নির্বাচনে উদাহরণ টানেন। এই সরকারের অধীনে আসন্ন নির্বাচনে যেতে তারা আস্থার সংকটে ভুগছেন, যার বিরোধিতায় হরতালসহ চলমান এই কর্মসূচি। আপনি কিভাবে দেখেন, তাদের অভিযোগের কতখানি যৌক্তিকতা আছেন?
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমার মনে হয়, তারা তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে এই কথাগুলো বলছে। আমরা দেখেছি ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি… যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অংশগ্রহণ না করে তাহলে তো অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা সরকারের পক্ষে তাদের নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। তবে আমরা এটাও দেখেছি তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তদানীন্তন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে অন্তর্বর্তী সরকারে কোন কোন মন্ত্রণালয় তারা নিতে চান সেই সুযোগও তাদের দিয়েছিলেন কিন্তু তারা নির্বাচন করবেন না। নির্বাচন না করা মানে অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক পন্থায় একটি সরকার গঠনের দিকেই তাদের ঝোঁক ছিল বলে মনে হয়। যাই হোক ২০১৪ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ২০১৮ সালে যখন নির্বাচন আসলো তখনও আমরা দেখলাম বিএনপি’র পক্ষ থেকে একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার যখন আবারও তাদের ভরাডুবি ঘটলো তখন তারা সরকারের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করলো। ২০২৪ সালের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠূ অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেই গ্যারান্টি সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বার বার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, এমনকি আমাদের উন্নয়ন সহযোগি যে রাষ্ট্রগুলো আছে তাদের পক্ষ থেকেও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখার জন্য তাদের যে পরামর্শও দিয়ে চলেছেন। আমার মনে হয় যে, ২০১৪ ও ২০১৮-তে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল বিএনপি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এবার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তারা স্বতোঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে। তাদের দলের অনেক নেতাকর্মীরাও এটা প্রত্যাশা করেন। ইতিমধ্যেই আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বলছেন তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। বিএনপি নিশ্চয়ই তাদের কর্মী ও সমর্থকদের যে প্রত্যাশা, সেটা পূরণে এগিয়ে আসবেন। এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ধারা রয়েছে তা অব্যাহত রাখবেন।
বার্তা২৪.কম: একটি বিষয় খুবই লক্ষণীয় যে এই বারের নির্বাচনকে ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলোর খুব উল্লেখযোগ্য তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভিয়েনা কনভেনশনের যে কুটনৈতিক শিষ্টাচার তার বাইরে গিয়েও অনেক তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে…
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: এর জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে দোষারূপ করে খুব লাভ হবে না। আমাদের রাজনীতিকরা বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমা দেশের প্রতিনিধিদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেন। এটা এক-দু’দিনের ফলাফল নয়। এটা দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক চর্চা আমাদের দেশে হয়ে আসছে, তাতেই এই বিষয়গুলো আমরা আজকে লক্ষ্য করছি। নিশ্চয়ই এটি ভিয়েনা কনভেনশনের যে নিয়ম-নীতির অনেকটা ব্যত্যয়। কিন্তু যেহেতু আমরা বিশ্বপল্লীতে বসবাস করি, আমাদের উন্নয়ন সহযোগিরা তাদের পরামর্শ দেবেন এটা আমরা অনেকটা উপলব্ধি করতে পারি কিন্তু সেটা যেন ভিয়েনা কনেভেনশনের লঙ্ঘন না হয়। বিদেশিদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি আমাদের রাজনীতিবিদ যারা রয়েছেন তাদের আত্মসম্মানবোধও কাজ করা উচিত। আমাদের সমস্যা-আমাদের সংকট, আমরাই নিরসন করব। এখানে অন্যের সাহায্য-সহযোগিতাটা আমাদের এতো প্রয়োজন নাই, তবে বিশ্বপল্লীতে যেহেতু আমরা বসবাস করি, এক দেশের সমস্যায় আরেক দেশ কিছু সাহায্য-সহযোগিতা করবেন এটাও অগ্রহণযোগ্য নয়।
বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশকে নিয়ে তিনটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের প্রতিযোগিতায় ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে উদ্ধারে পশ্চিমা দেশগুলো তথাকথিত ‘মানবাধিকার’ ও ‘গণতন্ত্র’ রক্ষায় বেশ দৌঁড়ঝাপ করছেন…
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমার মনে হয় প্রতিটি দেশেরই তাদের নিজের স্বার্থ নিয়ে কাজ করবে, এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানই বাংলাদেশকে এই জায়গায় নিয়ে গেছে। যার জন্য প্রত্যেক রাষ্ট্রই বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে তৎপর। বাংলাদেশ তার নিজস্ব যে পররাষ্ট্র নীতি যেটি বঙ্গবন্ধু আমাদের দিয়ে গেছেন ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ সেই লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে নানা রকম সমীকরণ দেখা যাবে, তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে ভিত্তি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমরা কুটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন। আমাদের এই ভারসাম্য রক্ষা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের স্বার্থ আমাদের কাছে চূড়ান্ত, অন্যদেশ তাদের স্বার্থ দেখবে। দু’টির মাঝে সমীকরণ করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের যে সুসম্পর্ক, কুটনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও আরও অন্যান্য সম্পর্ক তা বজায় রাখব। যেহেতু আমরা নিজেরাই বলি, আমরা শান্তির পৃথিবী চাই, তাই কোন সংঘাত সৃষ্টি করা আমাদের লক্ষ্য নয়। এটা যেমন আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে প্রযোজ্য তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রযোজ্য। আমরা দেখেছি, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, সেখানে আমাদের সরকারপ্রধান বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে শান্তির পক্ষে তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরছেন অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে। এটি আমরাও আশা করি।
বার্তা২৪.কম: আপনি জানেন অল্পদিন বাদেই জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষিত হবে। একজন প্রগতিশীল মানুষ ও শিক্ষাবিদ হিসেবে কি ধরণের নেতৃত্ব আশা করে…
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমার প্রত্যাশা একটাই, আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে গেছেন। তাদের বর্তমান সময়টাকে যে তারা উৎসর্গ করে গেছেন, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য, আমাদের ভবিষ্যত হচ্ছে কিভাবে আমরা দেশকে পরিচালনা করব। আমরা যদি বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারি তাহলেই আমরা ৩০ লক্ষ শহীদের যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন করতে পারব। আমাদের জাতির পিতা যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন, সেই সোনার বাংলায় কোন মানুষ বৈষম্যের শিকার হবে না। নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে আত্মসম্মান নিয়ে চলার মতো পরিবেশ পান-সেই ধরণের বাংলাদেশ যাতে আমরা গড়ে তুলতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা দরকার। যারাই নির্বাচিত হয়ে আসবেন তাদেরও এই লক্ষ্যে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পৌছে দেবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এর মধ্যেই প্রকৃত মঙ্গল নিহিত আছে। কারণ একটি দেশের সূচনা পর্বে যে উদ্দেশ্য বিধৃত বা ঘোষিত হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই তো ওই রাষ্ট্র কাজ করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
বার্তা২৪.কম: শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের আরও কি করবার আছে? রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এবিষয়ে আপনি কি প্রত্যাশা রাখেন-
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমি রাজনৈতিক দলগুলির কাছে এটাই প্রত্যাশা করব, তারা যদি নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করেন তাতে যেন শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। কারণ আমরা দেখেছি যে শিক্ষা ক্ষেত্রে নানাধরণের সমস্যা ও সংকট আছে। এবং নবীন প্রজন্মকে যদি একবিংশ শতাব্দির উপযোগি শিক্ষা দিতে চাই, তাহলে শিক্ষাকে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাঝে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু যেমন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একমূখি ও জাতীয়করণ করে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেছিলেন, সেটি ছিল ১৯৭২-৭৩ সালের বিবেচনায় বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। এরকম আরও বহু বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত আমাদের নেওয়া উচিত ছিল। যেটা আামরা সেভাবে নিতে পারিনি। আমরা শিক্ষিত বেকার তৈরি করছি। কোন ধরণের শিক্ষিত বেকার! যারা একবিংশ শতাব্দির উপযোগি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না। তারা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সচারাচর যে ডিগ্রি অর্জন করছেন সেই ডিগ্রি হয়তো তাদেরকে কেরানীর চাকরির জন্য তাদের প্রস্তুত করে কিন্তু কাঙ্খিত অন্য কোন চাকুরি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশে ভারত-শ্রীলঙ্কা-কেরিয়া-জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের লোকরা এসে কাজ করছে। কিন্তু আমাদের ছাত্ররা বছরের পর বছরে ঘুরছে, চাকুরি পাচ্ছে না; যেহেতু ..আমি তরুণদের মাঝেই বিচরণ করি, তরুণদের হতাশা, তারা বলে যে আমাদের বয়স চলে যাচ্ছে, আমরা চাকুরি পাচ্ছি না। এই যে চাকুরি না পাওয়া, বা চাকুরির প্রতি একটা নির্ভরতা আবার যথাযথ জায়গায় চাকুরি না পাওয়াটাও তাদের শিক্ষা ক্ষেত্রের আরেকটা দুর্বলতা। এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য যে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যে একটা গতিশীল পরিবর্তন আসা উচিত ছিল সেটা তো আমরা লক্ষ্য করছি না। ১৯৭৫ সালের পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে কোন শিক্ষানীতিই ছিল না। এর মধ্যে বহু রাজনৈতিক দল দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু একটা শিক্ষানীতি ছাড়া কোন প্রজাতন্ত্র যখন এগিয়ে যায় তখন বোঝা যাবে যে সেই প্রজাতন্ত্র অন্ধের মতো এগিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালে যে শিক্ষানীতি দিয়েছেন সময়ের বিবর্তনে সেই শিক্ষানীতি এখন পরিমার্জন-পরিবর্ধন করে এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করবে। কারণ একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে কিছুই করতে হবে না, তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেওয়াই যথেষ্ট। আমরা সেই জায়গায় যেতে চাই না। আমরা একটি বড় ধরণের সম্ভাবনার দিকে যেতে চাই এবং শিক্ষাকে সব রাজনৈতিক দল প্রাধান্য দিয়ে তাদের ইশতেহার প্রণয়ন করে তাহলে আগামী কিছু সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ সত্যিকারর্থেই বাংলাদেশ একটি সুশিক্ষিত নবপ্রজন্ম আমাদেশ উপহার দিতে পারবে।
বার্তা২৪.কম: মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দলটি দীর্ঘদিন সরকারে রয়েছে, কিন্তু প্রগতির যে চর্চা, নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির যে বিকাশ এই সময়ে সেই মাত্রায় উন্নীত হয়নি..আপনার কাছে কি মনে হয়, আমরা কেন ব্যর্থ হলাম…
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক: আমার মনে হয়, একটা রাষ্ট্রের সুষম উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের মনোজাগতিক উন্নয়নে সমান গুরুত্ব দেওয়ার দরকার আছে। কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের সরকার জনগণের সুবিধার্থে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে আবার নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। আমরা দেখেছি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, আমরা দেখেছি ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ একসঙ্গে হত্যার চেষ্টা …এবং এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই আওয়ামীলীগ সরকারকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। এজন্য নানা সীমাবদ্ধতা থাকবে। একটা দেশে মানুষের মধ্যে যদি সহযোগিতা-সহমর্মিতা না থাকে, বিশেষ করে একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি রাজনৈতিক দলকে যদি নিশ্চিহ্ন করার চক্রোন্তে লিপ্ত থাকে তবে অনেক কাজের সীমাবদ্ধতা থাকে। আশা করব আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসব। রাজনৈতিক মতপার্থক্য-মতভিন্নতা থাকবে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে সবাই একটি রাজনৈতিক দল করবেন না। এটি যেমন একটি দিক, আরেকটি দিক হচ্ছে..মতপার্থক্য সত্ত্বেও একটি জায়গায় ঐক্যমত্য থাকতে হবে। সেই ঐক্যমত্য থাকবে, দেশের মানুষের মঙ্গল সাধন। আমি হয়তো মঙ্গল সাধনের জন্য একটি পথ অবলম্বন করব, আরেকটি রাজনৈতিক দল হয়তো অন্য ধরণের চিন্তা-ভাবনা করে। তাতে তো কোন অসুবিধা নাই, এবং সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি যদি কোন রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করি, জনগণের ওপর আক্রমণ করি, জনগণ যদি আমার কাছে নিরাপদ না হয় তাহলে তো সেদেশে মঙ্গলজনক কিছু তো আশা করা যায় না। সেই ধরণের একটি কঠিন বাস্তবতা আমরা অনুভব করছি। আমাদের মূল দুর্বলতার জায়গাটি হচ্ছে, আমরা শিক্ষাকে সেভাবে গুরুত্ব দিতে পারি নি। বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন তা যদি আমরা অব্যাহত রাখতে পারতাম তাহলে আজ যারা রাজনীতি করছেন তারাও সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হতেন। তাদের মধ্যে মানবিকতা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ হয়তো জাগ্রত হতো।