শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সহযোগিতায় সারাদেশে ৩১ লাখ বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় দেশের ৩০০ টি উপজেলার ১৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসব বই বিতরণ করা হবে।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বই পড়ার অভ্যাসকে আমরা একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে চাই। আমরা প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাভ্যাস কার্যক্রম শুরু করছি। আগামী ১-২ বছরে ৩৩ হাজার প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম পৌঁছে দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটা যুগ পার করে এসেছি যেখানে পরীক্ষার হল থেকে বের হলেই অভিভাবকরা জিজ্ঞাসা করতো ‘কয়টা প্রশ্ন কমন পরেছে?’। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কমন প্রশ্ন বলে দিতে পারতো সে প্রতিষ্ঠানকে সেরা বলা হতো। আমরা সে মুখস্তনির্ভর পড়া থেকে বের হতে চাই। শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বই পড়া ও বুঝে পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। আমরা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে একই মানের হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছি। প্রায় ৮'শ এর বেশি বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করেছি। বিভিন্ন পর্যায়ে পাইলটিং করেছি। ২০১৭ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এগারো বছরের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের বইগুলো এখনো পরীক্ষামূলক সংস্করণ। এখানে পরিবর্তন-পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে। এসময় তিনি নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অহ্বান জানান।
অতিথির বক্তব্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমরা বই পড়াতে পড়াতে বইয়ের অভ্যাস তৈরি করতে চাই। রাশিয়া, ব্রিটিশ, ফ্রান্সে বই পড়ার অভ্যাস প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রচলিত আছে। আমরা বই পড়ার অভ্যাস তৈরির জন্য ৩১ লাখ বই দিচ্ছি যার মূল্য ৪৮ কোটি টাকা। নদী যেমন ঝর্ণা থেকে শুরু হয়, আমাদের পাঠাভ্যাসও এই কর্মসূচির মাধ্যমে শুরু হোক। আমরা যে উদ্যোগটি শুরু করেছি একদিন এটা মহীরুহ হবে, সারাদেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এই আশা রাখি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আগে ইউরোপ-আমেরিকায় বা আমাদের দেশেও মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময় হাতে করে বই নিয়ে যেতো। যাত্রাপথে বই পড়তো। এখন সে যুগ পালটে গেছে। মানুষের হাতে এখন মোবাইল-ডিভাইস চলে এসেছে। আমরা আমাদের অতীত চক্র ধরে রাখতে চাই, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাই। যার প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা সারাদেশের ৩০০টি উপজেলার ১৫ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছি। আগামীতে এটি আরও বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ও সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ খালেদ রহীম, অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ও সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আ ন ম আল ফিরোজ।